বিশেষ প্রতিবেদন । কুলাউড়ার দর্পণ :
ঊনকোটি" শব্দটি দ্বারা বোঝানো হচ্ছে "এক কোটি থেকে এক কম" অর্থাৎ ৯৯,৯৯,৯৯৯। এই শব্দটি হযরত শাহজালালের সাথে সম্পর্কিত একটি কিংবদন্তীর অংশ। কিংবদন্তি অনুসারে, ত্রিপুরার রাজা এই স্থানে এক কোটি দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হযরত শাহজালালের অলৌকিক ক্ষমতায় তা এক কোটি থেকে একটি কম অর্থাৎ ঊনকোটিতে এসে থেমে যায়। তাই এই স্থানটি "ঊনকোটি" নামে পরিচিত।
হযরত শাহজালাল (র:) ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফি দরবেশ, যিনি বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর অলৌকিক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হল, তিনি মক্কা থেকে সিলেটে আসার সময় কিছু স্বর্ণমুদ্রা একটি বাটিতে ভরে যমযম কূপে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই স্বর্ণমুদ্রাগুলো তার সিলেটে আসার আগেই তার দরগাহে পৌঁছে গিয়েছিল. এছাড়া, তিনি সিলেটে এসে একটি কূপ খনন করার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেন সেই কূপটি মক্কার যমযম কূপের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। তার দোয়া কবুল হলে তিনি লাঠি দিয়ে কূপের উপর আঘাত করেন এবং দুটি কূপের মধ্যে সংযোগ ঘটে যায়।
ঊনকোটি, যা বর্তমানে ত্রিপুরার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, সেখানে পাথরের বিশাল সব ভাস্কর্য দেখা যায়। কিংবদন্তি অনুসারে, এই ভাস্কর্যগুলো একরাতের মধ্যে এক কোটি দেব-দেবীর মূর্তি হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু হযরত শাহজালালের অলৌকিক ক্ষমতায় তা এক কোটি থেকে একটি কম অর্থাৎ ঊনকোটিতে এসে থেমে যায়।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাসহরে অবস্থিত এক রহস্যঘেরা ও ঐতিহাসিক তীর্থস্থান—ঊনকোটি পাহাড়। স্থানীয়রা একে চেনেন এককোটি থেকে এক কম নামেই। তাঁদের ভাষ্যমতে, 'ঊন' অর্থাৎ ‘এক কোটি থেকে এক কম’। বিশ্বাস করা হয়, এই পাহাড়জুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক কোটি দেব-দেবী ও পশুর পাথর খোদাই করা মূর্তি রয়েছে।
ঊনকোটি পাহাড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল মূর্তি, অসংখ্য খাদ ও উপত্যকা, এবং সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত একটি বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি শিবতীর্থ ঘর।
ঊনকোটি অবস্থান করছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা এলাকায়। কৈলাসহর শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। যদিও বাংলাদেশের দিক থেকে এটি অনেকটা কাছেই মনে হয়, তবুও পাহাড়ের উচ্চতা ও দুর্গমতা একে চ্যালেঞ্জিং গন্তব্যে পরিণত করেছে। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪০০ ফুট উঁচু এই চূড়ায় উঠতে এখন সিঁড়ির পাশাপাশি গ্রীলঘেরা নিরাপদ পথ রয়েছে।
গাইড জয়দীপ দাশ ওরফে ‘বড় বাবু’ জানান, “আগে মানুষ অনেক কষ্টে পাহাড় বেয়ে শিবমন্দির পর্যন্ত যেতো। এখন সরকারি উদ্যোগে উন্নত পথ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ভক্ত ও পর্যটকরা সহজে উপরে উঠতে পারেন।”
পাহাড়ের মাঝামাঝি একটি বিশ্রামস্থলে দেখা যায় একজন শিবসাধু তপস্যায় মগ্ন। দর্শনার্থীরা এখানে এসে তাঁকে প্রণাম করে, তাঁর কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে আবার শিবমন্দিরের দিকে অগ্রসর হন।
চূড়ার ওপরে রয়েছে একটি পাকা ঘর, যার ভিতরে অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি এবং একটি আলাদা কুড়ে ঘরে শিবলিঙ্গ পূজিত হয়। এই স্থান হিন্দুদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান হলেও এখন এটি ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
আগে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তি এবং চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকেও হাজার হাজার ভক্ত সীমান্ত অতিক্রম করে ঊনকোটি শিবতীর্থে যেতেন। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে এখন বাংলাদেশি ভক্তদের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভক্তসমাগম যেমন কমেছে, তেমনি কৈলাসহরের স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্থানীয়দের মতে, ধর্মীয় কারণে সীমান্ত আইন কিছুটা শিথিল করা হলে আবারও দুই বাংলার হিন্দু ভক্তদের মিলনমেলায় ঊনকোটি প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
📌 সংক্ষিপ্ত তথ্য:
📍 অবস্থান: কৈলাসহর, উত্তর ত্রিপুরা, ভারত
⛰️ উচ্চতা: সমতল থেকে প্রায় ৪০০–৪৫০ ফুট
🛕 প্রধান আকর্ষণ: পাথরে খোদাই করা শিবসহ এক কোটি মূর্তির কাহিনি
🚶♂️ বর্তমান অবস্থা: সরকারি পর্যটন উন্নয়ন, নিরাপদ সিঁড়ি, পুলিশ ফাঁড়ি
📅 মেলা: পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে বার্ষিক ভক্ত সমাগম
ভিডিও চিত্র দেখা জন্য
মোহাম্মদ জয়নুল হক
joynulhaque89@gmail.com
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত