স্টাফ রিপোর্টার।। কুলাউড়ার দর্পণ।।
সড়কের দুই পাশজুড়ে শুধু কাঁঠালের স্তূপ। ছোট-বড় কাঁঠালে ভরে উঠেছে হাট। ও রকম হাটে কাঁঠালই রাজা, আর সবকিছুই কোনোরকমে আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। হাটের বাতাসে আর কিছু নেই, শুধু পাকা কাঁঠালের ম–ম ঘ্রাণ। এ রকম সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়, হইচই ও কাঁঠালের মিঠে গন্ধ একাকার হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে প্রতি মৌসুমেই এই কাঁঠালের হাট বসে। কাছের–দূরের ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে হাটটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কাঁঠালকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে। টিলায় উৎপাদিত কাঁঠাল এই হাটে আসে, কেনাবেচা হয়।
গতকাল সোমবার সকাল সাতটার দিকে হাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাজারের পূর্ব দিকে নির্ধারিত স্থানটিতে তখনো হাট জমে ওঠেনি। অল্প কিছু কাঁঠাল মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের দুই পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। হঠাৎ করেই কাঁঠালের স্রোত নামে হাটে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, পিকআপ ভ্যান ও বাইসাইকেলে করে কাঁঠাল নিয়ে হাটে ভিড়তে থাকেন কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়কের মাথা থেকে পূর্ব দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁঠালের স্তূপ বাড়তে থাকে। পাইকাররা এসে কাঁঠাল দেখছেন, দরদাম করছেন। দরদাম ঠিক হলে তা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। দরদাম নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কখনো হালকা উত্তেজনাও তৈরি হচ্ছে। তবে অনেকের হস্তক্ষেপে তা নিমেষে মিটেও যাচ্ছে।
কুলাউড়ার লংলা খাস নতুন বস্তির মো. কদর আলী নিজের বাড়ির গাছের ৪০টি কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন। তিনি এই কাঁঠালের দাম চাইছেন চার হাজার টাকা। তবে এই টাকায় বিক্রি হবে না, এ ধারণা আছে তাঁর। প্রত্যাশিত দামের কাছাকাছি হলেই বিক্রি করে দেবেন। তিনি বলেন, এবার খরার কারণে কাঁঠালের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর এলাকায় বানরের উৎপাত আছে। কয়েক শ বানর তাঁদের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কাঁঠালগাছে হামলা করে। তাঁর গাছেও বানরের রাজত্ব আছে।
স্থানীয় গুড়াভূঁই গ্রামের রাজ্জাক মিয়া ১০০টি কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন হাটে। তিনি বলেন, এগুলো তাঁর কেনা কাঁঠাল। কাঁঠাল ধরার আগেই আর্থিক কারণে অনেক গাছমালিক আগাম ফসল বিক্রি করে দেন। রাজ্জাক মিয়া এ রকম সাত থেকে আটটি বাড়ির কাঁঠালগাছ আগাম কিনে নিয়েছিলেন। এখন সেই কাঁঠাল এনে হাটে বিক্রি করছেন। তাঁর মতে, গত বছরের তুলনায় এবার কাঁঠাল কিছুটা সস্তা।
কাঁঠাল ব্যবসায়ী, কাঁঠালচাষি ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাজার শতাধিক বছরের পুরোনো হাট। হাটটিতে প্রায় শত বছর ধরে কাঁঠালের হাট বসে। এমনিতে প্রতিদিনই বাজার বসে ব্রাহ্মণবাজারে। তবে সাপ্তাহিক হাটবার হচ্ছে সোম ও বৃহস্পতিবার। মূলত এই দুই দিন কাঁঠালের হাট জমে ওঠে। সকাল ছয়টা থেকে হাট শুরু হয়। সারা দিনই চলে। তবে কাঁঠাল বিক্রি বেলা দুইটার মধ্যেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। অতীতে ভাটি অঞ্চলের পাইকাররা নৌকা করে এসে এই হাট থেকে কাঁঠাল নিয়ে যেতেন। এখন জলপথ বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কপথেই এখন কাঁঠাল পরিবহন করা হয়। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শ বিক্রেতা হাটে কাঁঠাল নিয়ে আসেন। সিলেট, মৌলভীবাজার, গোয়ালাবাজার, জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসেন।
সময় যত গড়িয়েছে, বাজার তত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আষাঢ়ের ভেজা বাতাসে কাঁঠালের ঘ্রাণ ছাড়া আর কিছু নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট-বড় যানবাহনে করে কাঁঠাল আসছে, আবার হাট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এটাই এখন ব্রাহ্মণবাজারের সাপ্তাহিক হাটের প্রকৃত চেহারা। যত দিন কাঁঠাল আছে, তত দিন এভাবেই চলবে।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত