কুলাউড়ার দর্পণ রির্পোট।।
ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জনপ্রিয় গন্তব্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। বিরল প্রজাতির নানা জাতের গাছ ও প্রাণীতে ভরা সংরক্ষিত বন এটি। তবে পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত ভিড় ও হইহুল্লোড় ‘উৎপাত’ হিসেবে দেখা দেয়।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি, ট্যুর গাইড ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চা-বাগান, পাহাড়-প্রকৃতি, হাওর-বাঁওড়ের কারণে মৌলভীবাজার একটি পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে কিছু এলাকা আছে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য স্পর্শকাতর। এর মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি। এবারের দীর্ঘ ছুটিতে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাত দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৫৮১ জন দর্শনার্থী ঘুরতে গেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা।
লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, পর্যটনের ক্ষেত্রে লাউয়াছড়ার বন্য প্রাণী, পরিবেশ-প্রকৃতির এই বাস্তবতাকে অনেকটাই বিবেচনায় রাখা হয় না। পর্যটকেরা অন্য স্থানের মতো এখানেও ঘোরার আনন্দতে হইহুল্লোড় করেন। বেশির ভাগ পর্যটকদের মধ্যে গাইড সঙ্গে নিতে অনীহা আছে। বনের ভেতর করণীয় আচরণ অনুসরণ করেন না অনেকে। অনেক পর্যটক ব্লুটুথ স্পিকারে গান বাজিয়ে বনে ঘুরেন। বন্য প্রাণী বিশেষ করে বানরকে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। প্লাস্টিক প্যাকেট নির্ধারিত স্থানে না ফেলে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে গাড়িগুলো উচ্চ গতিতে হর্ন বাজিয়ে চলাচল করে। সব মিলিয়ে বনের নির্জনতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
পর্যটকের ভিড়, হইহল্লোড়ের কারণে যে প্রাণীদের অসুবিধা হয়, সেটা স্বীকার করে নিলেন পর্যটক সুভাষ বড়ুয়া।
পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, মানুষের উপস্থিতি, শব্দ—এসবে আতঙ্কিত বন্য প্রাণী অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়ে। গভীর বনের মধ্যে আত্মগোপনে চলে যায়। কিছু বানর ছাড়া আর তেমন কোনো প্রাণীর দেখা মিলে না। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।
প্রাণপ্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরবর্তী সময়ের একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর লাউয়াছড়ার আরেক সর্বনাশ করেছে অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক পর্যটন। এই বনের পর্যটক ধারণক্ষমতাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে মানুষ ঢুকেন এখানে। এটি এখানকার বন্য প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস, চলাচল ও প্রজননে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে বনের ভেতর রেলপথ, ব্যস্ত সড়কপথ প্রতিদিন বন্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাউয়াছড়া কোনো একক বিচ্ছিন্ন বাস্তুতন্ত্র নয়। এর আশপাশের চা-বাগান, জলাভূমি, গ্রাম, বন—সবকিছু মিলিয়েই এর সীমানা নির্ধারণ এবং স্থানীয় বননির্ভর জনগণকে সমন্বয় করে বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক বনব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার।
লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও মনিটরিং দলের সদস্য জনক দেববর্মা মনে করেন, বনে গণপর্যটন বন্ধ করলে বনের উপকার হবে। আর পর্যটকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার কাজী নাজমুল হক বলেন, লাউয়াছড়ায় পর্যটক সীমিত করতে টিকিটের ফি বাড়ানো হয়েছে। কীভাবে পর্যটক সীমিত করা যায়, বিকল্প কী তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে। সড়কে ২০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা, কিন্তু তা কেউ মানতে চান না। এখানে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ দরকার। বন্য প্রাণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের বিচরণে বন্য প্রাণীরা একটু আড়ালে থাকে।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত