মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাদিপুর গ্রামে সকালটা অন্য রকমভাবে আসে। এটি কাউয়াদিঘি হাওরপারের একটি গ্রাম। ওই গ্রামের পথ ধরে এগিয়ে গেলে সামনে পড়ে অন্তেহরি, এটি রাজনগর উপজেলার আরেকটি গ্রাম। অন্তেহরিও কাউয়াদিঘি হাওরের কোল ঘেঁষে শত বছর ধরে প্রাণ-প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে। বর্ষায় হাওরের উত্তাল ঢেউ সামলে এই গ্রামে মানুষের বাস। যত দূর চোখ যায় অবারিত রুপালি জলের ভাঁজ করা শীতলপাটি।
শীতে আরেক প্রকৃতি। দিগন্তজুড়ে শুধু বিস্তীর্ণ সবুজ। উড়ে যায় পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। এই অন্তেহরি গ্রামকে ছুঁয়ে শত বছরের পুরোনো করচগাছে নীরবে-নিভৃতে তৈরি হয়েছে এক টুকরা ‘জলাবন’। ওখানে জলে শরীর ডুবিয়ে পুরো বর্ষাটাই পার করে এই গাছেরা।
মৌলভীবাজার শহরতলির মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের চাঁদনীঘাট থেকে উত্তর দিকে একাটুনা-জগৎপুর হয়ে অন্তেহরির দিকে গেছে একটি পাকা সড়ক। অন্তেহরির ওই জলাবনের দিকে ‘যেতে যেতে পথে’ কাদিপুরে তখন মৌসুমি মাছের হাট জমে গেছে। এখানে হাটের মানুষ, ঘাটের মানুষ খুব বেশি না হলেও একরকমের প্রাণ আছে। কেউ রাতে কাউয়াদিঘি হাওর থেকে ধরা মাছ নিয়ে এখানে এসেছেন। কেউ এসেছেন পাইকারি দরে মাছ কিনে শহরে নিয়ে যেতে, কেউ গ্রামে গ্রামে ফেরি দিয়ে ওই মাছ বিক্রি করবেন। কিছু ক্রেতাও আছেন, যাঁরা হাওরের টাটকা মাছ কিনতে এখানে ছুটে এসেছেন।
একটা স্বল্পস্থায়ী হাট জমে কাদিপুরের ওই স্থানে। কারও ডোলায় চিংড়ি মাছ, কারও ডোলায় পুঁটি–টেংরাসহ বারো জাতের মাছ। কারও ডোলায় শিং-মাগুর, চ্যাং, কৈ, ভেদা, নানা রকম গুঁড়া মাছ।
কাদিপুর থেকেই অন্তেহরি গ্রামের শত বছর বয়সী করচগাছগুলোকে চোখে পড়ে। সেই কবে গাছগুলো এখানে মাথা তুলতে শুরু করেছিল, তা বলার মতো কেউ আর বেঁচে নেই। স্থানীয় মানুষেরা জানেন, তাঁদের বাপ-দাদারাও যেমন এই গাছগুলো দেখে গেছেন, এখন তাঁরাও দেখছেন। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, এই গাছ কেউ রোপণ করেনি। হাওরপারে প্রকৃতির আপন নিয়মে জলাভূমির অন্য সব গাছের মতো এরাও এখানে কোনো এক সময় শিকড় পুঁতেছে। তারপর ধীরে ধীরে বাতাসের বুকে ডালপালা মেলেছে। সেই যে সংসার পেতেছে তারা, এখনো আছে। আগে অনেক গাছ ছিল। নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তারপরও সব কটা একেবারে বাস্তুহারা হয়ে পড়েনি।
এখনো বর্ষা এলে এই করচগাছগুলো এক টুকরা জলাবন হয়ে ওঠে। বৈশাখের সময় থেকে কাউয়াদিঘি হাওরে পানি বাড়তে থাকে, তখন হাওর ভরা অবাধ জলের থইথই। তখন করচের গাছগুলো পানির তলায় ডুবতে থাকে। পানি যত বেশি, তাদের শরীরও ততই ডুবে। অনেকেই একপশলা শান্তির সন্ধানে ওই জলাবনের কাছে কখনো দুপুর, কখনো বিকেলের সময়টিকে পার করতে ছুটে আসেন।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, এবার এই আষাঢ়েও কাউয়াদিঘি হাওরে খুব বেশি পানি হয়নি। অন্য বছর এই সময়ে যতটা পানি হতো, এবার তার চেয়ে অনেক কম পানি হয়েছে। কিছু কিছু করচগাছের গোড়া অনেকটা শুকনা মাটিতে ভেসে আছে। অন্য বছর এই সময়ে গাছগুলো সারা শরীর ডুবিয়ে থাকে, এবার এখনো সে রকম পানি হয়নি। তবে নৌকা নিয়ে জলাবনে ভেসে বেড়াতে কোনো সমস্যা নেই। ওখানে জলের সঙ্গে জলের খেলা চলছে। ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’ কেউ শুনছে কি শুনছে না, ওখানে হাওর-জলের ইতিহাস সঙ্গে করে ‘জলাবন’ স্থির হয়ে থাকে।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত