কুলাউড়ার দর্পণ রির্পোট।।
বর্তমানে অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প অনেক এগিয়ে গেছে। ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশের সর্বত্রই। প্রতিদিন শত শত পর্যটক সিলেট জেলার জাফলং পর্যটনে দাঁড়িয়ে ভারতের বর্তমান মেঘালয় রাজ্যের উমগট নদীর উপর ডাউকির দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ সকলেই উপভোগ করেন। কিন্তু অনেকেরই কাছে এখনো অজানা যে এই ব্রিজটি কারা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ডিজাইন ও নির্দেশনায় শত বছর পূর্বে সেতু তৈরিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ঐ সময় বসন্ত কুমার দাস মন্ত্রী থাকার সুবাদে বাজেট পাস করিয়েছিলেন ও শ্রীহট্টের প্রখ্যাত প্রকৌশলী আবিদ রেজার ডিজাইন ও নির্দেশনায় ১৯৩২ সালে পূর্ণতা পায় ডাউকির উমগট নদীর উপর নির্মিত দর্শনীয় ঝুলন্ত সেতু। তারা উভয়ই তৎকালীন সিলেট জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে ১৯১৯ সাল অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতবর্ষ । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেড়াতে আসলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের শৈলশহর শিলং\'এ । শ্রীহট্টে এই খবর শুনে শুরু হলো গুরুদেবকে নিয়ে আসার তোড়জোর । বাঁধা হয়ে আসলো শিলং-শ্রীহট্ট সড়ক । এদিকে গুরুদেব মানুষের পিঠে থাবায় চড়ে আসতে অপরাগ । অবশেষে গুয়াহাটি-বদরপুর-লাতু-কুলাউড়া আন্তঃসংযোগ আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েতে কবিগুরু শ্রীহট্টে পদার্পণ করলেন ।
বিষয়টি প্রথমে সবার দৃষ্টিতে নিয়ে আসেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা ও আসাম প্রাদেশিক শিক্ষা ও অর্থমন্ত্রী দক্ষিণ শ্রীহট্ট (বর্তমানে মৌলবীবাজার) এর সন্তান আইন কৌশলী খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদ ওরফে কাপ্তান মিয়া । কিছুদিন পর কাপ্তান মিয়া প্রয়াত হন । তখন থেকেই রাজ্যের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠে শিলং-ডাউকি-তামাবিল-শ্রীহট্ট সড়ক নিয়ে । যদিও জয়ন্তিয়া মহকুমার জোয়াই হয়ে বেশ খানিকটা সময় ঘুরে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ভঙ্গুর মেঠোপথের একটি চিহ্ন ছিলো ।
বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশক । বিষয়টি যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও আসাম প্রাদেশিক সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী (প্রথমে পার্লামেন্ট স্পীকার, পরবর্তীতে মন্ত্রী) শ্রীহট্টের দক্ষিণ সুরমার রেঙ্গা গ্রামের সন্তান বসন্ত কুমার দাসকে । তিনি উদ্যোগ নেন রাস্তাটি নির্মাণের । মন্ত্রী বসন্ত কুমার দাসের অকৃত্রিম প্রচেষ্টায় অর্থবাজেটে সেটি বরাদ্দও হয়ে যায় । এগিয়ে আসে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ সরকার । কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড়কে বিভক্তকারী খরস্রোতা \'উমগট নদী\'। মন্ত্রী বসন্ত দাস প্রমাদ গুনলেন । এদিকে আসামের কাছাড় জেলার হাইলাকান্দি মহকুমার রাঙাউটি গ্রামের (পরবর্তীতে শ্রীহট্ট শহরের জিন্দাবাজারের কাজী ইলিয়াস পাড়ায় বসবাস) তরুণ ছেলে আবিদ রেজা চৌধুরী তখন \'বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ\' শিবপুর পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকৌশল শিক্ষা নিয়ে সবেমাত্র চাকুরীতে যোগ দিয়েছেন । সেটা ১৯২৯ সালের কথা। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আবিদ রেজা চৌধুরীই খুব সম্ভবতঃ শ্রীহট্টের প্রথম মুসলিম প্রকৌশলী । আবিদ রেজার ডিজাইন ও নির্দেশনায় ১৯৩২ সালে নির্মিত হলে পূর্ণতা পায় ডাউকির দর্শনীয় ঝুলন্ত সেতু ।
উল্লেখ্য যে, শ্রীহট্টে সুরমা নদীর উপর নির্মিত \'কীন্ ব্রিজ\' তৈরী হয়েছিল ১৯৩৬ সালে । ডাউকির উমগট্ নদীর উপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই সেতুকে তখন বলা হতো Gateway of Shillong. সংযোগ স্থাপিত হলো খাসি ও জৈন্তিয়া পর্বতমালার । উন্মোচিত হলো শিলং-শ্রীহট্টের নুতন দ্বার ।
এই আবিদ রেজা চৌধুরীর সন্তানই বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রয়াত প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী । যাঁকে সবাই চেনেন জেআরসি (JRC) নামে । আজ ডাউকির ঝুলন্ত সেতুকে দেখতে হাজারো পর্যটকের ভীড়ে ক\'জনই মনে রাখছে তৎকালীন মন্ত্রী বসন্ত কুমার দাস যিনি বাজেটে অর্থ পাস করিয়াছিলেন ও প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরীর নাম । আবিদ রেজা চৌধুরীর মামাবাড়িও ছিলো তৎকালীন শ্রীহট্টের করিমগঞ্জ মহকুমার জফরগড় পরগণার পাথারকান্দিতে । রেডক্লিফ লাইনের সুবাদে যা\' এখন ভারতে । আজ বাংলাদেশের পর্যটনতীর্থ জাফলং এ দাঁড়িয়ে ডাউকির ঝুলন্ত সেতু দেখলে কি ভাবতেন আবিদ রেজা কিংবা বসন্ত কুমার দাস ? ব্রিটিশদের দেয়া স্বাধীনতার নামে দেশভাগ আমাদের সকলকে কোথায় নিয়ে গেছে!
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত