স্টাফ রিপোর্টার।। কুলাউড়ার দর্পণ।।
পাহাড়ি খরস্রোতা নদ মনু। মৌলভীবাজারের জনজীবনে বহু প্রত্যাশিত ‘মনু প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ চলছে অনেকটা ধীরে। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও নদীপাড়ের অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা এখনও ক্ষতিপূরণের অর্থ পাননি।
এতে একদিকে যেমন দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা, অন্যদিকে মনু নদীর ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শত শত পরিবার। একই সাথে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজও আটকে আছে। প্রতিবছর আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয় না কিছুই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করার।
মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদের তীর রক্ষা প্রকল্পের-আওতায় ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহ বন্দর থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার উভয় তীরে দেখা দেয় সংকট। জেলা প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘ চার বছরে জমি অধিগ্রহণ হয়নি।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিলেও, সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণবিষয়ক ৭-ধারা নোটিশ জারি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাবে। তারপর পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরো বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এতে কাজের ধীরগতির অভিযোগ এলাকাবাসীর। চলতি বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা করছে শহরবাসী।
জানা যায়, ২০২০ সালে একনেক সভায় ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০২১ সালে কাজ শুরু হলেও চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এর অগ্রগতি মাত্র ৫৪ শতাংশ। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে, তবে তা বর্ধিত হয়ে ২০২৬ সালের জুনে গিয়ে ঠেকেছে।
মনু নদী ভারতের ত্রিপুরা থেকে এসে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা অতিক্রম করে কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণের কারণে নদী পাড়ের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়, আর শুষ্ক মৌসুমে নদী ভরাট হয়ে চরে পরিণত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মনু প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৮৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ৭৬৬ মিটার পুরনো বাঁধ মেরামত, ১২ কিলোমিটার চর অপসারণ এবং ৩৫টি স্থানে প্রতিরক্ষা কাজসহ মোট ৭২টি প্যাকেজে প্রকল্প বাস্তবায়ন। তবে ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা এবং জরিপ অসম্পূর্ণ থাকায় প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
ভূমি মালিকদের অভিযোগ, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণের জন্য পাঠানো হলেও আজও তারা সেই টাকা পাননি। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় নতুন জায়গায় গৃহ নির্মাণ করতে পারছেন না তারা, ফলে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে হচ্ছে।
শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউআইএ সিসির ম্যানেজার আব্দুস সবুর জানান, তারা কাজ নিয়ে বসে আছেন। এরমধ্যে তাদের ব্লকের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন। শুধু জমি বুঝিয়ে দিলে কাজে হাত দেবে। তবে কাজে ধীরগতির কারণে তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ বলেন, “ভূমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ অর্থ এখনও আসেনি। তবে আমরা দ্রুত বরাদ্দ প্রাপ্ত টাকা বিতরণের চেষ্টা করছি, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত না হয়।”
এদিকে ডিসেম্ববর ২০২৪ সালে ভুমি অধিগ্রহনের ৮৮কোটি ৩৩লক্ষ টাকার আংশিক আসলেও দীর্ঘ দিন ধরে ভুমির মালিকদের মুল্য পরিশোধ কেন হচ্ছেনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। তবে জমি অধিগ্রহণে স্বচ্ছতা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো: ইসমাইল হোসেন।
নদীপাড়ের মানুষের এখন একটাই চাওয়া, প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন হোক, আর অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ হাতে পেয়ে তারা যেন পুনর্বাসনের সুযোগ পায়। তা না হলে, মনু নদীর ভাঙনে একসময় পুরো জনপদ বিপন্ন হয়ে উঠবে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত