নিজস্ব প্রতিবেদক || কুলাউড়ার দর্পণ।।
সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকামুখী যাত্রা এখন পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতায়। সড়ক পথে উন্নয়ন কাজ চলায় প্রতিনিয়ত যানজট, ধুলাবালি আর দীর্ঘসূত্রতা। অন্যদিকে রেলপথেও কম নয় ভোগান্তি। টিকিট সংকট, ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটি হিজড়াদের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি, হকারদের উৎপাত, অতিরিক্ত যাত্রাবিরতিসহ দুর্ভোগ যেন শেষ হবার নয়। এ অবস্থায় যাত্রীরা দ্রুত দুটি স্পেশাল ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছেন—একটি সিলেট-ঢাকা রুটে, আরেকটি সিলেট-কক্সবাজার রুটে।
টিকিট নিয়েও নিশ্চিন্ত নয় যাত্রীরা
ঢাকা-সিলেট রুটে নিয়মিত চলাচলকারী ব্যবসায়ী আবুল বাশার, লিয়াকত আলী ও আব্দুল হান্নান জানান, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তাদের প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যেতে হয়। আগে শোভন চেয়ারে যাতায়াত করতেন, কিন্তু বর্তমানে সিন্ধা (এসি) টিকিট কেটেও মিলছে না নিশ্চিন্ত যাত্রা। ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক হিজড়ার দল উঠে চাঁদা দাবি করে। সিলেট, কুলাউড়া, শায়েস্তাগঞ্জ ও আযমপুর স্টেশন থেকে উঠা হিজড়াদের কারণে ৪০-৫০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। পাশাপাশি হকারদের কণ্ঠচিরাচরিত চিৎকার আর বিক্রয়ের ভিড়ে ট্রেনে স্বস্তিতে বসে থাকাও কঠিন।
এসি টিকিটেও ঠাঁই নাই!
কুলাউড়ার বাসিন্দা ও কাতারপ্রবাসী আতিকুর রহমান অভিযোগ করেন, কুলাউড়া থেকে টিকিট না পেয়ে তিনি সিলেট থেকে এসি সিন্ধা টিকিট কাটেন। কিন্তু আযমপুর স্টেশন থেকে টিকিটবিহীন যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, নরসিংদী—প্রতিটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত এসি বগিতেও দাঁড়ানোর জায়গা থাকেনি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক যাত্রী বগি থেকে বের হয়ে যান।
স্টেশনে আরও বড় হয়রানি
শুধু ট্রেনে নয়, ট্রেন থেকে নামার পর কমলাপুর স্টেশনেও সিলেটগামী যাত্রীরা আলাদাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য সিলেটি যাত্রীদের টার্গেট করে জিজ্ঞাসাবাদ, আটক এবং অর্থ আদায়ের অপচেষ্টা করেন। টাকা দিলে মিলছে ছাড়, না দিলে করা হচ্ছে ভয়ভীতি, এমনকি জেল-জরিমানার হুমকি পর্যন্ত।
এছাড়া সিলেটগামী ট্রেনগুলোর একের পর এক যাত্রাবিরতিতে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো এখন প্রায় লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ যাত্রীদের।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
গত ২ জুলাই আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেসে ফেরার পথে মৌলভীবাজারের সাংবাদিক মামুন তরফদার হামলার শিকার হন। নিজের নির্ধারিত আসনে বসতে গিয়ে এক যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছার পর ওই ব্যক্তি সহযোগীদের নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেন।
অন্যদিকে ১৩ জুলাই মৌলভীবাজারের আরেক সাংবাদিক রাহেল আহমদের স্ত্রী শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরে গলায় আঘাত পেয়ে আহত হন।
ইঞ্জিন বিকল আর পাহাড়ি দুর্ভোগ
২৫ জুলাই আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস আযমপুর স্টেশনে পৌঁছালে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। যদিও সিলেট থেকে ছাড়ার সময়ই ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ইঞ্জিন এনে ট্রেনটি প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে লাউয়াছড়া পাহাড়ি পথে, যেখানে ট্রেন পার হতে ২-৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
রেল কর্মকর্তারা কী বলছেন?
কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদ জানান, বিগত সরকারের পতনের পর ঢাকা-সিলেট রুটে ‘টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস’ নামে একটি স্পেশাল ট্রেন চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। সিডিউল পর্যন্ত নির্ধারিত হলেও রহস্যজনক কারণে তা বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হওয়ায় সিলেট-কক্সবাজার এবং সিলেট-ময়মনসিংহ দুটি নতুন রুটে ট্রেন চালু করাও অত্যন্ত জরুরি।
সিলেট স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, “টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস বরাদ্দ পেয়েও রহস্যজনকভাবে বাতিল হয়ে গেছে। অথচ স্পেশাল ট্রেন চালু হলে সিলেটবাসী ঢাকায় যেতে আরও স্বস্তি পেতেন। অন্য জেলার যাত্রীদের বাড়তি ভিড় কিংবা হয়রানির সুযোগও কমে যেত।”
সিলেট থেকে রাজধানী অভিমুখে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। এই সংকট নিরসনে রেলপথে বিশেষ ট্রেন চালু, যাত্রাবিরতি হ্রাস, টিকিট কালোবাজারি রোধ, হিজড়া ও হকারদের দমন, নিরাপত্তা জোরদার ও হয়রানি বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত