স্টাফ রিপোর্টার, কুলাউড়ার দর্পণ।। নীরবে চলে গেল ‘কুলাউড়ার ভাসানী’ ও ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেনের
ভাষার মাসে ভাষা সৈনিক এই মহান ব্যক্তিত্বকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা
‘কুলাউড়ার ভাসানী’ ও ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ খ্যাত কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা সৈয়দ আকমল হোসেন
“তিনি ১৯৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।”
জন্ম ও শৈশব
১৯২৭ সালের ৫ জুলাই মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া ইউনিয়নে বড়কাপন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই সংগ্রামী নেতা। তাঁর পিতা ছিলেন সৈয়দ ফরজান আলী এবং মাতা নুরুন্নেছা চৌধুরী। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র হাই স্কুল থেকে মেট্রিক এবং পরবর্তীতে সিলেট মদনমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কারণে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি।
রাজনৈতিক জীবনের সূচনা
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সৈয়দ আকমল হোসেন। তিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন।
১৯৪৬ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আসামের প্রথাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৪৭ সালে কুলাউড়া ও সিলেট কোতোয়ালী থানায় ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে মুসলিম লীগের পতাকা উত্তোলন করে সাহসিকতার পরিচয় দেন। হবিগঞ্জে এক বৃটিশ বিচারককে বিচারের আসন থেকে সরিয়ে নিজে ঐ আসনে বসার ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করলেও ছাত্র হওয়ায় তিনি মুক্তি পান।
সংগ্রামী রাজপথের নেতা
১৯৪৮ সালে পৃথিমপাশার জমিদার নবাব আলী আমজাদ খানের বাড়ির সামনে দিয়ে ৬০ জন কর্মীসহ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে পায়ে হেঁটে কাচারিঘর পর্যন্ত যান—পায়ে জুতা ও মাথায় ছাতা পরে। তখনকার সমাজব্যবস্থায় এটি ছিল দুঃসাহসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা।
একই বছর স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কুলাউড়ায় সমাবেশ করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় কুলাউড়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়।
১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী কুলাউড়ায় এলে তাঁকে নাজেহাল করার ঘটনাতেও নেতৃত্ব দেন সৈয়দ আকমল হোসেন।
ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে।
সে বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়ায় অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির বিশাল জনসভায় তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান নেতা।
সেদিন সভায় কমরেড আসদ্দর আলী, সৈয়দ আকমল হোসেন, তারা মিয়া, এম. এ. মজিদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সভাপতিত্ব ও নেতৃত্ব দেন।
কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে ভূমিকা
মৌলভীবাজার জেলায় যত আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছে—প্রায় সবগুলোতেই সৈয়দ আকমল হোসেন ছিলেন সম্মুখসারিতে।
১৯৫৩ সালে কুলাউড়ার বিজলীতে কৃষক সম্মেলন, ১৯৫৭ সালে লস্করপুরে কৃষক সমিতির মহাসম্মেলন, শ্রীমঙ্গলের বালিশিরায় কৃষক আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৬৩ সালে পাট্টার জমি দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানে তিনি নেতৃত্ব দেন; ওই বছর পুলিশের গুলিতে কৃষক নিহত হলে তাঁর নেতৃত্বে ২০ হাজার মানুষ মৌলভীবাজার পর্যন্ত ১৯ মাইল পায়ে হেঁটে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ ছাড়া তিনি ১৯৬৭ সালে বড়লেখার ধামাই চা-বাগানে চা-শ্রমিক আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে জননিরাপত্তা আইন ভঙ্গ আন্দোলন, ১৯৬৫ সালে রেল কর্মচারী আন্দোলনসহ মোট ৮৭টি চা-বাগানের শ্রমিকদের অধিকারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
ভাসানীর প্রেরণায়
তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ও সংগ্রামের প্রেরণার উৎস ছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। জীবনের প্রায় ১১ বছর তিনি জেল, নির্যাতন ও আত্মগোপনে কাটিয়েছেন।
এক জীবনের মূল্য
জেল-জুলুম, নির্যাতন ও বিপদের মুখেও তিনি পাকিস্তানি স্বৈরশাসন, দেশীয় জমিদার ও জোতদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠে লড়েছেন। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
তাঁর সংগ্রামী জীবনের উপর ইতিমধ্যে একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
এই মহান ভাষা সৈনিক, কৃষক-শ্রমিক নেতা ও নির্ভীক দেশপ্রেমিককে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে মাফ করুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত