কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। পূর্ণিমার আলোয় মহারাস উৎসবে মেতে উঠবেন মণিপুরিরা। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। মণিপুরি পাড়াগুলোতে বিকেল থেকেই মৃদঙ্গের তালে মণিপুরি গান ভেসে বেড়ায়। গান আর মৃদঙ্গের তাল অনুসরণ করে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে মণিপুরিদের নাচের প্রস্তুতি। মণিপুরিুঅধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। চলছে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য এবং রাসনৃত্যের মহড়া।
বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অন্যান্য বছরের মতো এবারও মণিপুরিদের পৃথক দুটি গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে রাস উৎসবের। উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮৩ তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে। রাসপূর্ণিমার আলোয় ভেসে যাওয়ার জন্য মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষার পালা।
স্থানীয় মণিপুরী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালবেলা ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখাল নৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখাল নৃত্য। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা শেষে রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে গেয়ে কৃষ্ণবন্দনা ভোর পযন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জনের মতো গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমুবেশি হয়।
শুক্রবার ৩১ অক্টোবর দুপুরে ও সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাঝের গাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়াগুলোতে চলছে রাস উৎসবের মহড়া। প্রায় ১৫ দিন ধরে এখানে রাস উৎসবের মহড়া চলছে। মহড়ায় আসা মণিপুরি ছেলেমেয়েদের রাসনৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন রাসনৃত্যের শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ। সঙ্গে সজল কুমার সিংহ মৃদঙ্গ বাজিয়ে ও রীনা সিংহা গান গেয়ে সেই মহড়ার তাল দিচ্ছিলেন। রাস উৎসবে এই গান ও তালের সঙ্গেই সারারাত ধরে নাচতে হবে শিল্পীদের। প্রায় ১৫-২০ জন ছেলেমেয়ে শিক্ষকদের কথা অনুযায়ী মহড়া দিচ্ছিলেন।
মহড়ায় আসা কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিথি সিংহা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখি। কিন্তু সবাই রাস উৎসবে অংশ নিতে পারে না। এ জন্য আমাদের অনেক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এখন প্রায় ১৫ দিন ধরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন মহরায় অংশ নিচ্ছি। রাস উৎসব নিয়ে আমাদের ভালো প্রস্তুতি আছে। আমরা চাই আমাদের এই উৎসবে সবাই আসুক।’
মহড়ায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নিশা মনি সিনহা বলেন, ‘মহারাস উৎসব আমাদের বড় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অনেক দর্শক থাকেন। আমাদেরও সেই রকম প্রস্তুতি নিতে হয়। রাসধারী আমাদের সবকিছু শিখিয়ে দেন। রাস উৎসবে অংশ নিতে পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পাই আমরা। এই রাস উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারি। আমাদের চর্চা অব্যাহত থাকে।’
শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ বলেন, ‘মূলত রাস উৎসবের প্রায় এক মাস আগ থেকেই মহড়া শুরু করি। রাস উৎসবে অংশ নেওয়া মণিপুরি ছেলেমেয়েদের অনেকেই নতুন। আবার অনেকে পুরোনো। আমরা এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে তাদের প্রস্তুত করি। প্রতিদিন নিয়ম মেনে সবাই আসেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ মহড়া চলছে।’
রাসনৃত্যের আরেক শিক্ষক সজল কুমার সিংহ বলেন, দ৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাখাল নৃত্য শুরু হবে। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হবে রাস নৃত্য। এই রাসনৃত্যের জন্যই মহড়া হচ্ছে। দেশুবিদেশ দর্শনার্থীরা এই রাস উৎসব দেখতে এখানে ভিড় করেন। এটা মণিপুরিদের ঐহিত্যবাহী উৎসব।’
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ এর সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মহোৎসব উপলক্ষ্যে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও সকলের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত