স্টাফ রিপোর্টার।। জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলতলা ইউনিয়নে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত ‘মেসার্স ভাই ভাই স’মিল’-এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার পরও স’মিলের মালিক আব্দুর রাজ্জাক কাপ্তান ও মাসুক মিয়া জুড়ী বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ কবীর আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের নথিপত্রে প্রমাণিত হয়েছে, স’মিলটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং এর নামে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৫ মে মেসার্স ভাই ভাই স’মিল’ (গ্রাহক নম্বর ৪৬০২৬৭৬৮, হিসাব নম্বর সি/২২২, মিটার নম্বর ৫৯৪১৪৯২৬) এর নামে জুড়ী বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে মালিক আব্দুর রাজ্জাক কাপ্তান ও মাসুক মিয়াকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, তাঁর মিটারে অতিরিক্ত বিল সংক্রান্ত তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করা হয়েছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের এনার্জি অডিটিং ইউনিট সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী যাচাই-বাছাই করে জানান যে, উক্ত মিটারটি ৬ ডিজিটের এবং মিটারের প্রদত্ত রিডিং সম্পূর্ণ সঠিক। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত বিউবো’র বকেয়া বিল ৩,৯২,৬৯৪ টাকা বলে নিশ্চিত করা হয়।
এই তদন্তের বিষয়ে গ্রাহক পুনঃআপত্তি প্রদান করলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দ্বিতীয় দফার এই তদন্তেও গ্রাহকের মিটারটি ৫ ডিজিটের পরিবর্তে ৬ ডিজিটের বলে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড জুড়ী অফিস থেকে গ্রাহককে ১০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুত বিভাগ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উক্ত স’মিলটি সীমান্তের মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপিত। যেখানে আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স’মিল স্থাপন করা নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কোনো অনুমোদন ছাড়াই স’মিলটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। পাওনা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এড়াতে মালিকপক্ষ আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ ছড়িয়ে তাঁর সুনাম ক্ষুন্নের চেষ্টা করছেন।
আবাসিক প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিউবো জুড়ী আবাসিক প্রকৌশলীর দপ্তরে ধার্য্যকৃত সকল বাণিজ্যিক প্যারামিটারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেট তথা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ হতে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির। চিঠিতে তিনি ভবিষ্যতে এই দপ্তরের অনুকূলে বিউবোর্ডের ধার্য্যকৃত সকল বাণিজ্যিক প্যারামিটার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এরকম সন্তোষজনক পারফরমেন্সের ধারা অব্যাহত রাখতে দপ্তরের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর নিকট প্রত্যাশা করেন । জানা যায়, এই দুই অর্থবছরে সিস্টেম লস, সিবি রেশিও, বকেয়া সমমাস ইত্যাদি বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্যারামিটারের লক্ষ্যমাত্রা সন্তোষজনকভাবে অর্জিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজে সন্তুষ্ট হয়ে এরকম অভিনন্দন পত্র পাঠিয়েছেন।
নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার টার্গেট ছিল ৮.৫০% তা অর্জিত হয়েছে ৭.৭৭%। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের টার্গেট ছিল ১০২.০০%, আর অর্জিত হয়েছে ১০৭.৩৬% । বকেয়ার সমমান ১.৫০ লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছে ০.৯৫। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সিস্টেম লসের টার্গেট ছিল ৮.০০%, আর অর্জিত হয় ৬.২৩%। বকেয়া আদায়ে টার্গেট ১০১.৮০% আর অর্জিত হয়েছে ১০২.৮১%। বকেয়া সমমান ০.৮৩ থাকলেও অর্জিত হয়েছে ০.৬৮ । এই অর্জন অতীতের ধারাবহিকতায় অনেক বেশী।
জুড়ী বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী মো. কবীর আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্থানীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কার্যকর উদ্যোগ ও কঠোর তদারকির ফলে বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া বিল আদায়, সিস্টেম লস হ্রাস ও সিবি রেশিও উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তিনি নিয়মিত অভিযান ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ’ মামলা দায়েরের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়েছে। ফলে জুড়ী বিদ্যুৎ অফিস বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলা তথা সিলেট বিভাগের অন্যতম সফল দপ্তর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এব্যাপারে আব্দুর রাজ্জাক কাপ্তান বলেন, আমার স’ মিলে প্রতি সাপ্তাহে একবার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেন। আমার বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে বিদ্যুৎ আদালতে মামলা দিয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক কাপ্তানকে তার স’ মিলের লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড় পত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতকিছু জানি না ফাইলে দেখে বলতে হবে।
এ ব্যাপারে আবাসিক প্রকৌশলী মো. কবীর আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালে আমি যোগদানের পর থেকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। গ্রাহকের যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, মেসার্স ভাই ভাই স’মিল’ কর্তৃপক্ষকে বিল পরিশোধের নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও তারা বিল পরিশোধ করেননি । পরে নিরুপায় হয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনের বাইরে আমি কিছুই করিনি অথচ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মূলত বকেয়া বিল পরিশোধ না করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে আমাকে হয়েও প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, জুড়ীতে আবাসিক প্রকৌশলী হিসেবে কবির আহমেদ যোগদানের পর থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে পরপর দুইবার সেরা হওয়ার সফলতা দেখিয়েছে জুড়ী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা।
সম্পাদক: ময়নুল হক পবন, প্রকাশক: রিয়াজুল হক রেজা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোহাম্মদ জয়নুল হক.
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়,কামাল প্লাজা (১ম তলা), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার,ফোন: ০১৭১১-৯৮৩২৬৯
ঠিকানা: 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢 𝐈𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐩𝐚𝐫𝐤 𝐃𝐈𝐏, 𝐀𝐥 𝐁𝐚𝐲𝐚𝐧 𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝟐𝟎𝟏𝟏, 𝐏.𝐎 𝟏𝟎𝟎𝟏𝟐𝟏- 𝐃𝐮𝐛𝐚𝐢. সংবাদ, ছবি ও বিজ্ঞাপন পাঠানোর ঠিকানা: Email: kulauradorpon@gmail.com ওয়েবসাইট: www.kulaurardarpan.com,
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত