নিঃশব্দে বিলুপ্ত এক রাতের শিকারি
বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজার একসময় ছিল বন্যপ্রাণে সমৃদ্ধ এলাকা। এই অঞ্চলের পাহাড়ি বন, খাসিয়া-জৈন্তিয়া অঞ্চল ও চা-বাগানসংলগ্ন অরণ্যে দেখা যেত এক রহস্যময় নিশাচর প্রাণী—ধূসর হায়েনা (Striped Hyena)। এর গা ছমছমে ডাক আর ডোরা-দাগওয়ালা চেহারা একসময় গ্রামের মানুষের কল্পনায় রাক্ষস হয়ে উঠেছিল। তবে বাস্তবে এটি ছিল লাজুক প্রকৃতির এবং মৃত প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখত।
অনেক প্রবীণ লোক এখনো মনে করতে পারেন—রাতে দূর পাহাড় থেকে ভেসে আসা তার ডাক। কিন্তু আধুনিকায়নের ঢেউ, বনভূমি উজাড়, চাষাবাদের বিস্তার ও জনবসতির কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় এই হায়েনা।
এর সাথে যুক্ত হয় কুসংস্কার ও ভুল ধারণা—কেউ ভাবত এটি মানুষ বা গৃহপালিত পশুর ক্ষতি করে, আবার অনেকে বিশ্বাস করত এর দেহ দিয়ে ওষুধ তৈরি যায়। ফলে প্রাণীটি হয়ে ওঠে অযথা শিকারের লক্ষ্য।
আজ ধূসর হায়েনাকে বাংলাদেশে “স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত” (Locally Extinct) ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে, প্রকৃতিতে এর ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এই হারিয়ে যাওয়া শুধুই একটি প্রাণীর অনুপস্থিতি নয়, বরং আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের এক নিঃশব্দ পতন।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীববৈচিত্র্য রক্ষা শুধু গাছ লাগানো নয়, বরং প্রাণীদের জন্য জায়গা রেখে প্রকৃতিকে সহনশীল করে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের।
কুলাউড়ার দর্পণ রির্পোট।।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।