বিশ্বনাথ, সিলেট ব্যুরো।।
‘মরিলে মাটিতে হইবে বাসা, পড়িয়া থাকিবে লক্ষণশ্রী আর রঙ্গের রামপাশা। লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা নায় আমার, জানত যদি হাসন রাজা বাঁচবে কতদিন বানাইত দালান কোঠা করিয়া রঙ্গিন।’ মরমি কবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী তার জীবদ্দশায় এমন কালজয়ী বেশ কয়েকটি গান লিখেছেন। আর সেই গানগুলো আজও মানুষের মধ্যে অমর হয়ে আছে।
১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর লক্ষণশ্রীতে তিনি মারা যান এবং সেখানকার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশার কবরস্থানে হাসন রাজার বাবাসহ অনেক উত্তরসূরির কবর রয়েছে।
‘মরিলে মাটিতে হইবে বাসা, পড়িয়া থাকিবে লক্ষণশ্রী আর রঙ্গের রামপাশা। লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা নায় আমার, জানত যদি হাসন রাজা বাঁচবে কতদিন বানাইত দালান কোঠা করিয়া রঙ্গিন।’ মরমি কবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী তার জীবদ্দশায় এমন কালজয়ী বেশ কয়েকটি গান লিখেছেন। আর সেই গানগুলো আজও মানুষের মধ্যে অমর হয়ে আছে।
১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর লক্ষণশ্রীতে তিনি মারা যান এবং সেখানকার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশার কবরস্থানে হাসন রাজার বাবাসহ অনেক উত্তরসূরির কবর রয়েছে।
জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন হাসন রাজা। তার বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন জমিদার। সুনামগঞ্জ, সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশা, ভারতের করিমগঞ্জ ও শিলচরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের পাঁচ লাখ ২০ হাজার বিঘা জমি ছিল। এ জমিদার পরিবারের তৃতীয় পুত্র ছিলেন হাসন রাজা। গান ও দর্শনের জন্য হাসন রাজা বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
মরমি কবি হাসন রাজা সিলেট অঞ্চলসহ সারা দেশে লোকসংগীতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার গানগুলোতে আধ্যাত্মিকতা ও লোকজ সুরের সমন্বয় দেখা যায়। যা তাকে জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে। তার গানে জীবনের গভীর অর্থ, প্রেম ও আধ্যাত্মিকতাবিষয়ক ভাব প্রকাশ পেয়েছে। তার গান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
আধ্যাত্মিকতা আর গানের জগতে ডুবে যাওয়ায় হাসন রাজা জীবদ্দশায় রামপাশায় কোনো রাজপ্রাসাদ ও কোনো রঙমহল গড়ে তোলেননি। তার মৃত্যুর পর রামপাশার বাড়িতে দুটি বৈঠকখানা নির্মাণ করেছিলেন হাসন রাজার ছেলে দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ দুটি স্থাপনা হাসন রাজার স্মৃতি হিসাবে পরিচিতি পায়। সেই স্মৃতিবিজড়িত ভবনগুলোকে পরগাছা আর আগাছায় ঘিরে রেখেছে। ভেঙে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন স্থান। পশ্চিম পাশে পরগাছায় ঘেরা রয়েছে চুন-সুরকির তৈরি প্রায় ১৮ ইঞ্চি প্রস্থের বিশাল দেওয়াল। দোতলা ভবনে ঝুলছে ঝুঁকিপূর্ণ সাইন বোর্ড।
রামপাশার বাড়িতে দুটি স্থাপনাই হাসন রাজার শেষ স্মৃতি। বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঐতিহ্য হিসাবে স্থাপনা দুটির ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে স্মৃতিটুকু কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। এগুলো ছিল পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। রাজা হাসন রাজার স্মৃতি ধরে রাখা খুবই জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। কবি ও সাংবাদিক সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, হাসন রাজা তার গান ও আধ্যাত্মিকতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তার বাড়িতে ‘হাসন রাজা স্মৃতি পরিষদ’ গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসন রাজা চৌধুরীর উত্তরসূরি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী বলেন, দেওয়ান হাসন রাজার সম্পদ বংশধরদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই প্রবাসী। আবার কেউ কেউ মারা গেছেন। তার স্মৃতিটুকু সংস্কারের মাধ্যমে ধরে রাখার মতো কেউ নেই। তবে স্মৃতিটুকু ধরে রাখার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।