✍️ প্রতিবেদক | কুলাউড়ার দর্পণ::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইন এলাকার মেয়ে ইতি গৌড় (১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ইতি এই চা-বাগান থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
ইতি এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে ঢাবিতে চান্স পাওয়ার পর শাহজালালের ভর্তি বাতিল করে ঢাবিকে বেছে নেন।
তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ইতি। তাঁর মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক, যিনি দুই বছর আগে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করলেও ২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে কাজ ছেড়ে দেন। এখন তিনিও অসুস্থ।
ইতি বরমচাল মিশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি (জিপিএ ৪.৬৭) এবং ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে এইচএসসি (জিপিএ ৪.৮৩) পাস করেন।
ইতি বলেন, “ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই। ঢাবিতে সুযোগ পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে পরিচিতদের পরামর্শে ঢাবিকে বেছে নিই।
তাঁর বড় বোন স্মৃতি গৌড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো বোন সুইটি গৌড় ঢাকায় নার্সিং কোর্স করছেন। মায়ের নামে থাকা দুই বিঘা জমি বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা ও পড়াশোনার খরচ চালানো হয়।
ইতির এই সাফল্যে খুশি বাবা শংকর গৌড় বলেন, “বড় বড় স্যারদের দেখে ভাবতাম, যদি আমাদের মেয়েরাও এমন হতে পারত! এখন ঈশ্বর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।”
চা-বাগানের বাসিন্দা ও শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ দাস বলেন, “ইতি আমাদের বাগানের আলো। ওর জন্য আমরা গর্বিত।”
ইতোমধ্যে স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষার্থী সংগঠন ইতিকে সহায়তা করেছেন এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইতি বলেন, “ভালোভাবে ফিন্যান্স শেষ করে ভবিষ্যতে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
এই প্রতিবেদনটি “কুলাউড়ার দর্পণ” পত্রিকার পক্ষ থেকে ইতি গৌড়সহ চা-বাগানের সকল শিক্ষার্থীর প্রতি শুভকামনা জানিয়ে উৎসর্গ করা হলো।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।