বিশেষ প্রতিবেদন | কুলাউড়ার দর্পণ
শুধু গ্যাস নয়—অথবা তরল সোনারূপী তেলই নয়—বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তঘেঁষা সিলেট অঞ্চলেই লুকিয়ে আছে আরও বহু অমূল্য খনিজ সম্পদ, যার অন্যতম হলো ইউরেনিয়াম।
ভারত কয়েক বছর ধরে এই ইউরেনিয়াম দখলের লক্ষ্যে সীমান্তজুড়ে বিচিত্র অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএসএফের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় পরিকল্পিত গোলযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রশ্ন জাগে—বাংলাদেশ সরকারের টনক কবে নড়বে? নজরই বা কবে পড়বে?
সিলেটের গ্যাস, তেল ও ইউরেনিয়ামের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত
১৯৫৫ | হরিপুর-১ নম্বর কূপে গ্যাস আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গ্যাস যুগে প্রবেশ করে।
১৯৬০ | রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়।
১৯৬৩ | হবিগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্রের খনন সম্পন্ন হয়।
১৯৮১ | বিয়ানীবাজারে গ্যাসের সন্ধান মেলে।
১৯৮৬ (২৩ ডিসেম্বর) | সিলেট-৭ নম্বর কূপে তেল আবিষ্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ তেল যুগে প্রবেশ করে।
১৯৮৬ | কুলাউড়ার হাড়ারগজ পাহাড়ে প্রথমবারের মতো ইউরেনিয়াম আকরিকের সন্ধান মেলে।
১৯৮৬ (জুন–জুলাই) | বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞ দল সেখানে ইউরেনিয়ামের বিপুল মজুত নিশ্চিত করে। তবে খরচ বহুল প্রকল্প হওয়ায় কার্যকর পদক্ষেপ আর নেয়া হয়নি।
১৯৮৭ | ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্র (অবস্থান: কুলাউড়ার বরমচাল সংলগ্ন) আবিষ্কৃত হয়।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, সিলেট বেসিনে এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেলের মজুত রয়েছে। কিন্তু গত দুই দশকে সরকার তেল অনুসন্ধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সীমান্ত পরিস্থিতি: বাড়ছে উদ্বেগ
সীমান্তে বিনা উসকানিতে বিএসএফের গুলিতে ইতিমধ্যে বহু বাংলাদেশি নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছেন।
জৈন্তাপুর ও ডিবি হাওরের নিচে ইউরেনিয়ামের মজুত দখলে রাখতে ভারত কৌশলে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করছে—বিশেষ করে বিজয় সিংহ ও রাজেন্দ্র সিংহের সমাধিকে কেন্দ্র করে।
এই কূটকৌশল সীমান্ত সংঘাতকে আরও ঘনীভূত করছে এবং বাংলাদেশের ভূসম্পদকে হুমকির মুখে ফেলছে।
করণীয় (সারাংশ)
১. আন্তর্জাতিকীকরণ:
জাতিসংঘ, আইএইএ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ভারতের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা।
২. কূটনৈতিক চাপ:
ভারতকে একতরফা (unilateral) খনন থেকে বিরত রাখতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চাপ সৃষ্টি করা।
৩. আইনি ব্যবস্থা:
যৌথ চুক্তি ছাড়া যেন কোনো খনন না হয়, তা নিশ্চিত করা; প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের।
৪. ঘরোয়া অনুসন্ধান:
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের মাধ্যমে দ্রুত অনুসন্ধান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন।
৫. সম্পদ রক্ষা পরিকল্পনা:
সিলেটকে দেশের “শক্তির নতুন রাজধানী” হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ।
সর্বোপরি, বাংলাদেশের ভূসম্পদের নিরাপত্তায় সরকারকে এখনই সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে—অন্যথায় ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তথ্য, নেট ও কুলাউড়ার দর্পণ
ভিডিও নিউজ
📌 প্রথম পর্ব
✍️ মোহাম্মদ জয়নুল হক
📧 ই-মেইল: joynulhaque89@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।