স্টাফ রিপোর্টার।। জুড়ী.
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ময়লা-আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা। নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় প্রতিদিন যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। এতে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।
আঞ্চলিক মহাসড়ক, উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন সড়ক, বাজারের কেন্দ্রস্থল, রাস্তাঘাট, অলি-গলি, নদীর পাড়সহ যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় পুরো শহর যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার কারণে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে চারদিকের পরিবেশ। ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া হাসপাতালের বর্জ্য, রেস্তোরাঁর পঁচা-বাসি খাবার, দোকানপাটের আবর্জনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা শহরের প্রবেশমুখে ফেলা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে।
বিশেষ করে উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনের আঞ্চলিক মহাসড়কের নাইট চৌমুহনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ সড়কে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক বা রাস্তাঘাটের পাশেই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এসব ময়লা-আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধে মানুষের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার ওপর সামান্য বৃষ্টিতেই এসব এলাকার সড়ক বা রাস্তার পাশে ফেলা আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় প্রায় পুরো শহরজুড়েই ময়লার ভাগাড় তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েও কোনো সমাধান পাইনি। ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছেই।
২০০৪ সালে জুড়ী উপজেলা ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে কোনো সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সচেতন মহল ক্ষোভ জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছেন, অচিরেই যেন শহরের বাইরে ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
এই সড়কে চলাচলকারী জুড়ী মডেল একাডেমির শিক্ষার্থী নৌরিন, মাইশা ও রিয়া বলেন, আপনারা একদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে বুঝতেন আমরা কী যন্ত্রণায় আছি। ময়লা-আবর্জনার স্তুপের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে বমি আসে। দিন দিন এসব ময়লা-আবর্জনার কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অচিরেই শহরের বাইরে ময়লা-আবর্জনার নির্দিষ্ট জায়গা করার জোর দাবি জানাই।
জুড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি তানজীর আহমেদ রাসেল ও জুড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, এটা একদিনের সমস্যা নয়। বছরের পর বছর ধরে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলায় ভাগাড় তৈরি হয়েছে। কেউ খোঁজ নেয় না। কেউ কথা শোনে না। কী যে গন্ধ, বলে বোঝানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলার সভায় বার বার এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
বর্জ্য ব্যবস্থার এমন চরম ভোগান্তি দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবিদরাও। পরিবেশবিদ উপাধ্যক্ষ ফরহাদ আহমেদ বলেন, যেখানে-সেখানে ও নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশের বিপর্যয়সহ বাড়ছে নদীদূষণ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, সরকারি খাস জমি অথবা ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে শহরের বাইরে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।