জুড়ী প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ভয়াবহ শব্দ দূষণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শব্দের মাত্রাতিরিক্ত তীব্রতায় এখানকার মানুষ ক্রমশ বধিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, শব্দ দূষণের কারণে কেবল শ্রবণশক্তি নয়, মানুষের আচরণগত পরিবর্তন, স্নায়বিক রোগ এবং শিশুদের মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সড়কে যানবাহনের হর্ণ, জেনারেটরের কর্কশ শব্দ, ভবন নির্মাণের কাজের যন্ত্রের শব্দ, সিডি ও ক্যাসেট দোকানের উচ্চ শব্দসহ বিভিন্ন উৎস থেকে নিরবিচারে শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। এ কারণে মানুষের নাক, কান ও গলায় নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। অনেকে আচরণে রুক্ষ হয়ে উঠছেন, মেজাজে ভারসাম্য হারাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনে ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল। অথচ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, জুড়ীতে চলাচলকারী যানবাহনের হর্ণের মাত্রা ১২০ থেকে ১৮০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা স্বাভাবিক মাত্রার প্রায় তিন-চার গুণ বেশি। গত দেড় যুগে এই শব্দ দূষণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
এনজিও সংস্থা ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ’-এর এক গবেষণায় জানা গেছে, জুড়ী শহর ও আশপাশের এলাকায় শব্দ দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের নির্ধারিত কিছু স্থাপনার ১০০ মিটারের মধ্যে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে মাইক বাজানো ও যানবাহনের হর্ণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু জুড়ীতে এসব নিয়ম বাস্তবে মানা হচ্ছে না।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একাধিক চিকিৎসক জানান, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে থাকলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। কান ভিতরে একটি নিরবচ্ছিন্ন শব্দ শোনা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় টিনিটাস বলা হয়। একবার এই সমস্যা দেখা দিলে কানের যন্ত্র ব্যবহার করেও স্বাভাবিকভাবে শুনতে পারা সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। তারা মানসিকভাবে ভীত হচ্ছে, মনোযোগ হারাচ্ছে, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পাশে অবিরাম মাইকের শব্দে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বিআরটিএর মতো সংস্থাগুলো শব্দ দূষণ রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করছে না। আইন থাকলেও তার প্রয়োগের অভাবে জুড়ীতে এই দূষণ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।