নিজস্ব প্রতিবেদক মৌলভীবাজার।।
বাজার বললেই একটা বারোয়ারি হইচই করা চেহারা চোখে ভাসে। অনেক রকম পণ্য, অনেক রকম পসরা, অনেক রকম মানুষ। এখানেও তা–ই আছে। তবে এই হাট অন্য হাট থেকে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম, একটু ভিন্ন। সপ্তাহে এক দিন এক বেলায় হাটটিতে এই ভিন্ন চেহারা ফুটে ওঠে। এখানে দুপুর গড়ালেই হাট জমতে শুরু করে। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গেই গুটিয়ে যায় সব আয়োজন। সবকিছু নিয়ে ঘরমুখী হন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতা। মুহূর্তেই পরিণত হয় ভাঙা হাটে।
এটি শত বছরের হলেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরব বাজার দুই দশক ধরে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে অন্য এক আলাদা পরিচিতি পেয়েছে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ভৈরব বাজার শুধু ছাগল, হাঁস-মোরগ, কবুতরসহ বিভিন্ন রকম পোষা পাখির কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে এই হাটে এসব প্রাণী নিয়ে আসেন বিক্রেতারা, ভিড় করেন ক্রেতারা। কয়েক ঘণ্টার কেনাবেচায় জমজমাট হয়ে ওঠে হাটটি।
মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল সড়কের মধ্যেই পড়েছে ভৈরব বাজারটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এটি শত বছরের পুরোনো। চা-বাগান, হাইল হাওর, সমতলের গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে এটি সম্প্রসারিত হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটির অবস্থান ভালো। অন্য হাটবাজারের মতোই এই হাটে মাছ, সবজি, মৌসুমি নানা রকম ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রতিদিনই হাট বসে। তবে বছর ২০ আগে থেকে এটি নতুনভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখানে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মোরগ, কবুতর, পোষা পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পোষা প্রাণী বিক্রি হয়ে থাকে। শুধু আশপাশের গ্রাম নয়; শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা এই হাটে ভিড় করেন। দুপুরের পর থেকে হাটে লোকজনের আসা শুরু হয়। বেলা দুই-তিনটার মধ্যেই হাটটি জমে ওঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট চলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ধীরে ধীরে হাটটি ভেঙে যায়।
ভৈরব বাজারের ইজারাদার লিটন আহমেদ গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, হাটটির বয়স ১০০ বছরের বেশি হবে। তবে ২০ বছর আগে থেকে হাটটি হাঁস, মোরগ, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাঁদের পোষা হাঁস, মোরগ, ছাগল নিয়ে এই হাটে আসেন। পাইকারেরাও অনেক ধরনের প্রাণী নিয়ে আসেন। প্রতি শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে হাট শুরু হয়, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হাট চলে। আগে বাজারের একদিকে সড়কের পাশে এই হাট বসত। বর্তমানে বাজারের উত্তর পাশে ব্যক্তিগত জমি ইজারা নিয়ে হাটকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
ভৈরব বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের পূর্ব দিকের স্থান ছাগলের জন্য নির্ধারিত। হাটে বেশ কিছু পাঁঠাও বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। হাটের পশ্চিম দিকে হাঁস-মোরগসহ নানা রকম প্রাণীর মেলা। সারি ধরে ছোট-বড় মোরগ নিয়ে বসেছেন অনেকে। এর মধ্যে যেমন মোরগের ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি অনেক নারী-পুরুষ গেরস্ত তাঁদের পোষা মোরগ নিয়ে হাটে এসেছেন। কেউ নিয়ে এসেছেন হাঁস, মোরগের ছানা।
অনেকে নিয়ে এসেছেন নানা জাতের কবুতর। কেউ বসেছেন তিতির পাখির ছোট-মাঝারি বাচ্চা নিয়ে। কেউ সাদা-কালো দুই জাতেরই খরগোশ নিয়ে বসেছেন। শৌখিন লোকজন এখানে ভিড় করছেন, তাঁরা ঘুরে ঘুরে প্রাণী পছন্দ করছেন। দরদাম করছেন। দরদামে পোষালে খাঁচাসহ পাখি, কবুতর বা অন্য প্রাণী নিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনগর থেকে আসা একজন বিক্রেতা জানান, তিনি দুটি মেষ নিয়ে এসেছিলেন। এ দুটিই তাঁর পোষা। দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি ১২ হাজার টাকার নিচে তিনি বিক্রি করতে চাইছেন না। তাই মেষ দুটি ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।
দেখতে দেখতে হাট কখন যে ফাঁকা হতে চলেছে, কখন যে সূর্য ডুবতে বসেছে, এদিকে অনেকেরই খেয়াল নেই। অবিক্রীত প্রাণীগুলো নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা। সন্ধ্যা অন্ধকারে ডুবতে থাকলে হাটের কোলাহল স্তব্ধ হয়ে আসে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।