স্টাফ রিপোর্টার।। কুলাউড়ার দর্পণ
পাহাড়ি টিলা বেয়ে বিস্তীর্ণ জনপদ। রয়েছে একাধিক ঝর্ণা। সীমান্ত ঘেঁষা জনপদটি যেন সবুজে মোড়ানো। সবকিছু স্বাভাবিক চলার মাঝে ধরা পড়ে এক বৈচিত্র্য। একের পর এক নিখোঁজ হতে থাকে চরাতে দেয়া ছাগল। টিলায় ঘাস খেতে দিয়ে এলে সন্ধ্যায় গিয়ে মিলত না সেই ছাগল। এক এক করে নিখোঁজ হয়ে পড়ে ছয় ছাগল।
এদিকে চোর সন্দেহে অতিষ্ঠ হয়ে পাহাড়ায় বসে লোকজন। তবে দেখা মেলে ভয়ংকর কিছু। বিশালাকৃতির এক অজগর সাপ। নিমিষেই যেন ছাগলটিকে সাবাড় করে দিচ্ছিল। তখনই কাছে গিয়ে সাপটিকে ধরে স্থানীয়রা। তবে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন না থাকায় সাপটি মেরে ফেলে স্থানীয় লোকজন। ঘটনায় যেন মোড় ঘুরিয়ে দেয় অন্যদিকে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোবারতল গ্রাম। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আসাম ও ত্রিপুরা ঘেঁষা এ জনপদ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে উঁচু টিলায় ওৎ পেতে বসে থেকে ছাগলকে সাবাড় করতে অজগর সাপকে দেখে স্থানীয়রা।
এদিকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লাঠিসোঁটা দিয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন এলাকাবাসী।
বিষয়টি জানাজানির পর এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন তৎপরতা চালায়। এতে সাপ মারার সাথে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েকদিন ধরে এলাকার পাহাড়ি টিলায় ছাগল নিখোঁজের ঘটনা ঘটছে। যা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। তবে ছাগল নিখোঁজের রহস্য বের করতে গিয়ে এ অজগর সাপ দেখতে পান তারা।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী রোহান জানান, ‘ছাগল নিখোঁজের ঘটনায় বিশাল আকৃতির অজগর সাপকে দেখতে পেয়ে লোকজন অজগরটিকে ঘিরে ফেলেন এবং একপর্যায়ে সাপটিকে মেরে ফেলেন। এটা খুবই দুঃখজনক।’
এলাকার অব্দুল মুকিত জানান, ‘পরপর কয়েকদিন ধরে এলাকা থেকে রহস্যজনকভাবে ৬টি ছাগল নিখোঁজ হয়ে পড়ে। অবশেষে পাহাড়ি টিলা থেকে অজগর সাপ নেমে ছাগল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানা যায়। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে তারা সচেতন না থাকায় সাপ মারার ঘটনা ঘটেছে।’
এলাকার ইউপি সদস্য ময়নুল হক জানান, ‘পাহাড়ি এলাকা থাকায় খাদ্যের অভাবে বন থেকে অজগর সাপ হয়ত লোকালয়ে খাদ্যের সন্ধানে এসেছে।’
দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, ‘শুনেছি গ্রামের লোকজনদের কয়েকটি ছাগল অজগরটি খেয়ে ফেলেছে। ঘটনার সময় একটি ছাগল খাচ্ছিল সাপটি। পরে স্থানীয় লোকজন সাপটিকে মেরে ফেলে।’
বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো: রেজাউল মৃধা বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারওয়ার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। ওইখানে নেটওর্য়াক না থাকায় আপডেট খবর জানা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সাপ হত্যাকারীদের উপর মামলা হবে।’
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।