নিজস্ব প্রতিবেদক || কুলাউড়ার দর্পণ
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেছেন, “একটা বছর দেখতে দেখতে এই স্বৈরাচারী হাসিনার এক বছর পলায়নের দিন উদযাপন করছি আমরা। তার সাড়ে পনের বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত হয়েছে একটি দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।”
বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের এসআর প্লাজার সামনে জেলা বিএনপির আয়োজনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’র বর্ষপূর্তি ও ছাত্র-জনতার বিজয় উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাসের রহমান বলেন, “বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য শেখ হাসিনা কম চেষ্টা করেননি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম-খুন করেছে, হত্যা করেছে, জেলে পুরেছে। আল্লাহর বিচার আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই করে দিয়েছেন তাকে। ছাত্র-জনতা এবং পেছনে বিএনপির সক্রিয় ভূমিকায় এই স্বৈরাচারিণীকে আমরা বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে সে যে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই দেশ থেকেই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা কিছুই না, সে ভারতের দালাল, ভারতের চর। ভারতের দালাল হিসেবে সাড়ে পনেরো বছর এদেশে রাম রাজত্ব কায়েম করেছিল সে। এ ধরনের রাম রাজত্বের সুযোগ শেখ হাসিনা তো দূরের কথা, তার প্রেতাত্মারাও আর কোনদিন পাবে না। এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ইনশাআল্লাহ আমরা ধীরে ধীরে শেষ করে দেব। কারণ, আওয়ামী লীগ হলো একটা গুন্ডা পার্টি, মাস্তান পার্টি—যেটা দেশের মানুষ চৌদ্দশ মানুষ মরার পর, বিশ হাজার আহত হওয়ার পর বুঝেছে।”
“তাদের নেত্রী ছিল গুন্ডাদের হেডকোয়ার্টার,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৭৭ বছরের গুন্ডি এখন দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। আজ সে দিল্লিতে কোথায় লুকিয়ে আছে? আওয়ামী লীগাররা মুখ দেখাবে কেমন করে? গর্ত থেকে বের হয়ে তারা কীভাবে চেহারা দেখাবে?”
জেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্বের দিকে ইঙ্গিত করে এম নাসের রহমান বলেন, “আজকে মৌলভীবাজারের এই চার খলিফা কোথায়? নিজেরা বসে বসে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছে। যেন দেশটা তাদের বাপের সম্পত্তি! কিন্তু দেশের মানুষ গতবছর বুঝিয়ে দিয়েছে—এ দেশ জনগণের, কারো বাপের সম্পত্তি নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের বর্ষপূর্তিতে স্বৈরাচারিণীকে সরানোর আন্দোলনে চৌদ্দশ মানুষ নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ১৩৩টি শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন বিশ থেকে পঁচিশ হাজার মানুষ, অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, সমবেদনা ও রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের পাশে আছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। ইনশাআল্লাহ আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য আরও সহযোগিতা করা হবে।”
নেতাকর্মীদের ঢল, নজরকাড়া শোভাযাত্রা
শোভাযাত্রার আগে বিকেল ৩টা থেকে টানা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ অংশ নেন জেলার ৭টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার নেতাকর্মীরা। জেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎস্যজীবী দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুনসহ অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ছিল ভ্যান গাড়িতে সাজানো বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড, যাতে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং এম নাসের রহমানের ছবি।
এছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছয় কোমলমতি শিশু—আব্দুল আহাদ, সাফফাত সামির, রিয়া গোপ, জাবির ইব্রাহিম, রাকিব হাসান ও হোসেন মিয়ার ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড ছিল শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ।
শোভাযাত্রা পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন—
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আলহাজ আব্দুল মুকিত, সিনিয়র নেতা মোশারফ হোসেন বাদশা, আবুল কালাম বেলাল, স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, সেলিম মোঃ সালাউদ্দিন, এম এ হক, আশরাফুজ্জামান খান নাহাজ, আনিছুজ্জামান বায়েছ প্রমুখ।
আয়োজনে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, যা বিগত দেড় দশকের মধ্যে জেলার রাজনীতিতে বিরল দৃশ্য হয়ে উঠেছিল।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।