বাংলাদেশ মুসলিম লীগের বর্ষীয়ান নেতা, প্রখ্যাত আইনজীবী এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ. এন. এম. ইউসুফ ছিলেন কুলাউড়া ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান এবং জনসেবামূলক ভূমিকা আজও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হয়।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
এ. এন. এম. ইউসুফ ১৯১৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার দাউদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে সিলেট গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করে পাকিস্তান উত্তর প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মোক্তারশীপ পাশ করে ঢাকায় আইন পেশা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কৃতিত্বের সাথে বিএ, এলএলবি ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা
১৯৪৭ সালের ঐতিহাসিক সিলেট গণভোট আন্দোলনে তিনি মুসলিম লীগ ‘ভলানটিয়ার কোর’-এর আঞ্চলিক অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এই গণভোটে সিলেটকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত করার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক (কনভেনশন) মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭২–১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেন।
১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি নিউ টাউন শান্তি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৮–১৯৭১ সালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সম্পাদক এবং ১৯৭৯–১৯৮১ সালে গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ঢাকাস্থ কুলাউড়া সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান
এ. এন. এম. ইউসুফ কুলাউড়া অঞ্চলের শিক্ষাবিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর আমলে কুলাউড়ায় একাধিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এলাকায় উচ্চশিক্ষার বিস্তারে এক নতুন যুগের সূচনা করে। তাঁর সরাসরি সহযোগিতা ও উদ্যোগে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি ও ভবন খালি করে দেওয়া হয়, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত হয়। কুলাউড়ার শিক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করার এই অবদান তাঁর অন্যতম স্থায়ী কৃতিত্ব।
নির্বাচনী জীবন
১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুলাউড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৬ সালে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে তৃতীয় জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যু, দোয়া ও বিনীত অনুরোধ
২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকার মগবাজারের রাশমনো ক্লিনিকে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এই জীবনে তাঁকে দেখতে গিয়ে বা তাঁর কর্মকাণ্ড মূল্যায়নে যদি কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এই আল্লাহর বান্দাকে। মহান আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসাবে কবুল করুন—আল্লাহুম্মা আমীন।
এই জীবনী লেখার সময় যদি কোন তথ্যগত ভুল বা ত্রুটি থেকে থাকে, তা কুমার দৃষ্টিতে (ক্ষমার দৃষ্টিতে) দেখবেন এবং প্রয়োজনে সংশোধনের জন্য পরামর্শ প্রদান করবেন।
কুলাউড়ার দর্পণ নিউজ ডেস্ক
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।