ষ্টাফ রিপোর্টার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন প্রার্থী ও ভোটাররা অনেকটাই সরব। শুরু হয়েছে ভোটের আলোচনা। কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ এই সংসদীয় আসনে এমন তৎপরতাই এখন চোখে পড়ছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চলছে ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি। নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর থেকে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠে তৎপর হয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
৫ই আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের রাজনৈতিক সমীকরণে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। টানা প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ আসন এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের কব্জায় নিতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিস তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে বিএনপি’র প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। অন্যদিকে, পট পরিবর্তনের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই তাদের দলীয় কোনো কার্যক্রম নেই। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, এনসিপি বা অন্য কোনো দলের সক্রিয় সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। এ সময়ে বিএনপি, জামায়াত ও খেলাফত মজলিস ঘরোয়া বৈঠক, জনসভা, কাউন্সিল ও কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ছাড়া জেলার পাশাপাশি প্রায় সময়ই কেন্দ্রীয় নেতারাও দলীয় নানা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন।
আসনটিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভোটের মাঠে আলোচনায় বিএনপি, জামায়াত। অন্যান্য দলের সাংগঠনিক তৎপরতা খুব একটা না থাকায় ভোটের হিসাবেও তারা রয়েছেন অনেকটাই পিছিয়ে। তবে সবক’টি দলের নেতাকর্মীরা নিজ দলের পক্ষে ভোটযুদ্ধে সম্মানজনক অবস্থানে টিকে থাকতে ও জয় পেতে নানা কৌশলে এগুচ্ছেন। নানাভাবে ভোটারদের মনজয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রার্থীরা।
বড়লেখা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং জুড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১। এ নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে ১৬টি চা-বাগান, অসংখ্য আগর ও রাবার বাগান, হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ নানা পর্যটন স্পট। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন।
জানা যায়, এ আসনটিতে ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার এবং বিএনপি ২ বার জয়ী হয়েছে। সর্বশেষ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দখলে থাকা (একাধিক বারের এমপি ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন) এই আসনের নাগরিকরা যেমন ছিলেন উন্নয়নবঞ্চিত, তেমনি মন্ত্রীর এলাকা থাকায় মামলা-হামলায়ও ছিলেন নাজেহাল। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতাও এখন চোখে পড়ার মতো। ধারণা করা হচ্ছে, ত্রয়োদশ নির্বাচনে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভোট জয়-পরাজয় নির্ধারণে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে গণ্য হবে এমনটি বলছেন সচেতন মহল।
এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা: মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, কাতার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা শরীফুল হক সাজু, বিএনপি’র সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর কন্যা ব্যারিস্টার জহরত আবিদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন আহমদ মিঠু। এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম এবং খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কাতার প্রবাসী মাওলানা লুকমান আহমদকে চূড়ান্ত করেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী আরব আমিরাত শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা সাইফুল ইসলাম ইয়াহইয়া।
মনোয়নপ্রত্যাশী কাতার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা শরীফুল হক সাজু বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ শাসনামলে নানা জুলুম ও অত্যাচার উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি আগলে রেখেছেন। মাঠে সক্রিয় থেকে বিপদে-আপদে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। ব্যারিস্টার জহরত আবিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন নিয়ে তিনি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জামায়াতের ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তিনি যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা লুকমান আহমদ ও নাছির উদ্দিন আহমদ মিঠুর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।