শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : শ্রীমঙ্গলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কেউ প্রভাব খাটিয়ে, কেউ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে, কেউ বাড়ি ঘরের কাজের কথা বলে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতিসহ ছড়ার পাড় ভাঙ্গন, বালু পরিবহনে রাস্তা ভাঙ্গনসহ নানাভাবে দূর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
৩০ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের শান্তিবাগ এলাকায় ভুড়ভুরিয়া ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠে শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির আহবায়ক শামীম আহমদ ও রাশেদ মাস্টারের বিরুদ্ধে। এরকম একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় দলীয় পদবীর প্রভাব খাটিয়ে তারা এ বালু উত্তোলন করছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির আহবায়ক শামীম আহমদ জানান, আমি কখনো বালুর ব্যবসা করিনি, ভবিষতেও এই ব্যবসা করার ইচ্ছা নাই। তবে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ভিডিও ভাইরাল এর বিষয়ে তিনি বলেন, তার বাসা ছড়ার পাড়ে। পাহাড়ী ঢলে তার বাসা ও রাস্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তিনি দুইজন শ্রমিক লাগিয়ে ছড়া থেকে বালু তুলে বস্তায় ভরে ছড়ার পাড়ে ও রাস্তায় দিয়েছি।
এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, ইজারাবিহীন ঘাট থেকে কারোরই বালু তোলার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। যারা এ কাজের সাথে জড়িত হবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, বিগত এক বছরে ইতিমধ্যে ১৬ নিয়মিত মামলা, ৭টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালানা করা হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমানে বালু ও যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত বালু ইতিমধ্যে তিনবার নিলাম করা হয়েছে যার পরিমান ৭১২৮৫ ফুট।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে শনিবার শ্রীমঙ্গল শান্তিবাগ এলাকায় অভিযানে যায় মোবাইল কোর্ট। সেখানে জনৈক শামীম আহমদ তার বাসার পাশে ছড়ার পাড় রক্ষার জন্য ছড়া থেকে বালু তুলে তা বস্তায় ভরছিলেন। তবে এটিও করা যাবেনা বলে জানান তিনি, তিনি স্থানীয় লোকজনদের ডেকে শামীম আহমদসহ সবাইকে বলেন, এরকম কাজ ভবিষতে না করার জন্য। আর তা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো: মহিবুল্লাহ আকন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শান্তিবাগ এলাকায় অভিযানে যান। সেখানে কিছু লোক কর্তৃক অবানিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলনের সত্যতা পান। এবং স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করে আসেন। ইজারাবিহীন কোন ঘাট্ থেকে বানিজ্যিক কিংবা অ-বানিজ্যিক কোনভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবেনা। তিনি শ্রীমঙ্গল ভূমি অফিসে যোগদান করেছেন মাত্র একসাপ্তাহ এরই মধ্যে তিনদিনই বালুর অভিযানে বের হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২৬টি বালু মহাল রয়েছে যার মধ্যে ইজারা দেয়া হয়েছে ৬টি। ইজারাধিন ছড়াগুলো হচ্ছে জৈনকাছড়া জাগছড়া (পশ্চিম অংশ), সুমইছড়া, নারায়নছড়া, বৌলাছড়া ও বড়ছড়া। বাকী ছড়াগুলো ইজারা নেই।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন ছড়া, ও জমির মাটি কেটে তার নিচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র । এতে একদিকে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সড়ক ও জনপদের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বলেন, ইজারা নিয়ে নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করার সরকারী নিয়ম রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের সবগুলো ছড়া যদি বৈধ ইজারার আওতায় নিয়ে আসলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কমে আসবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন আরো বলেন, প্রতিটি ছড়ার দৈঘ্য ৮/১০ কিলোমিটার কোনটা তারও বেশি। এই ছড়াগুলোতে সিলিকাবালু উৎপন্ন হয়। এই দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ছড়াগুলো নজরদারীতে রাখতে তাদের হিমসীম খেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতন হওয়া ছাড়া তা রক্ষা করা কষ্টকর। তবে কষ্ট হলেও আমরা অভিযান অভ্যাহত রাখবো। যারাই তা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।