স্টাফ রিপোর্টার। কুলাউড়ায় উপজেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সেই কাউন্সিলে জয়জয়কার হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক পাঁচ নেতার। যারা বিজয়ী হয়েছেন প্রত্যেকেই ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির ত্যাগী নেতা। স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে তারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে দলের দুর্দিনে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এবারের উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে তারা হেভিওয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে বাজিমাত করে চমক দেখান। এদিকে কাউন্সিলে বিজয়ী ছাত্রদলের সাবেক পাঁচ নেতাকে দেশ-বিদেশে থাকা বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর পৌর শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে ৯২৩ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৫ পদে ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। শনিবার কাউন্সিল অধিবেশনের পর রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রেদওয়ান খাঁন। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ ও ২০১৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল হয়েছিল।
এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৪৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কুলাউড়া পৌরসভার পাঁচবারের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন বাচ্চু। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি নেতা শওকতুল ইসলাম শকু পান ৪২৫ ভোট। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৩৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল জামাল। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান মনির পান ৩৪৮ ভোট, বদরুল হোসেন খান ১৭২ ও জয়নুল ইসলাম জুনেদ পান ৩৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি শামীম আহমদ চৌধুরী পান ৩২৯ ভোট, সুফিয়ান আহমদ পান ১৯৯ ভোট। সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে ৪১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা কমর উদ্দিন আহমদ কমরু। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মইনুল হক বকুল পান ৩৩৮ ভোট ও সারোয়ার আলম বেলাল পান ১৬১ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আব্দুল মুক্তাদির মনু। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক ছাত্রনেতা সিপার আহমদ পান ২৫৩ ভোট, দেলোয়ার হোসেন ২১৫ ভোট, নুরুল ইসলাম ইমন ৭৭ ও মঈন উদ্দিন স্বপন পান ৪০ ভোট।
সম্মেলন পর্বে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রেদওয়ান খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি. কে. গউছ। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট আবেদ রাজা প্রমুখ।
একনজরে বিজয়ী পাঁচ নেতার রাজনৈতিক কর্মকান্ড:
জয়নাল আবেদীন বাচ্চু : উপজেলা বিএনপির নব-নির্বাচিত সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্চু ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক দুইবারের সভাপতি, উপজেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক, কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন বিএনপির দুই বারের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির দুই বারের সিনিয়র সহ সভাপতি। ২০১৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পরপর পাঁচবার কুলাউড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং কয়েকবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল জলিল জামাল: উপজেলা বিএনপির নব-নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল জামাল ছিলেন কুলাউড়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি, কুলাউড়া উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সদস্য, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
বদরুজ্জামান সজল : উপজেলা বিএনপির নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল ছিলেন কুলাউড়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। পরে ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতি শেষ করে উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির দুই বারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে সদস্য ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০-১৫টি মামলার আসামী ছিলেন। একাধিকবার কারাবরণও করেছেন। ১/১১ এর সময় যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ৫ মাস ৮দিন জেলে ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একাধিক মামলার আসামী ছিলেন। এছাড়া তিনি কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির চতুর্থ বারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কমর উদ্দিন আহমদ কমরু: উপজেলা বিএনপির নব-নির্বাচিত সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কমর উদ্দিন আহমদ কমরু ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক দুই বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের তিন বারের সাবেক সহ-সভাপতি। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সহ-সভাপতি ও সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালের মুজিববাদী ছাত্রলীগের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। বিএনপি করতে গিয়ে ১৮ বার কারাবরণ করেন। প্রায় দেড় শতাধিক মামলার আসামী ছিলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের ছড়ার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে ডিবি ও পুলিশের হাতে টর্চার সেলে নির্যাতিত হয়ে প্রতিবন্ধিতার স্বীকার হন। তিনি উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ১৯ বছরের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
আব্দুল মুক্তাদির মনু : উপজেলা বিএনপির নব-নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির মনু ছিলেন কুলাউড়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর পাঁচ বার মেম্বার নির্বাচিত হন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।