সিলেট ব্যুরো; দক্ষিণ সুরমা থানার হিলু রাজীবাড়িতে টিনশেডের ঘরে গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীদের গোপন গোডাউন, যা স্থানীয়দের মতে পুরো এলাকায় যেনো মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে মাদক সম্রাট সমুজ আলী ও তার স্ত্রী হাসনা বেগম। অভিযানে তাদের হেফাজতে থাকা টিনশেডের ঘর থেকে ৩৩৫ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়, যার পরিমাণ ৯০.১ লিটার এবং বাজার মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ টাকা। ১৮ সেপ্টেম্বর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ওসি মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এবং এসআই অমিত সাহার সহযোগিতায় অভিযান চালানো হয়। পুলিশ অভিযানের সময় প্রমাণ পায় যে সমুজ আলী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় যুব সমাজকে মাদক সরবরাহ করছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পূর্বেও তিনটি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ধৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া, ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, নবাগত কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরীর নির্দেশনায় মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে এবং শহরের যুব সমাজকে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় মাদক ব্যবসা এতটাই বেড়ে গেছে যে বিভিন্ন টিনশেডের ঘর এবং নির্জন জায়গা যেনো মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও স্থানীয় আন্দোলন না থাকলে যুব সমাজের প্রজন্ম মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি চঞ্চল মাহমুদ ফুলর ও ফ্রিডম ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ কামরান তালুকদার মনে করেন, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মাদক নির্মূল সম্ভব। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও অভিভাবকরা সক্রিয় ভূমিকা রাখলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। স্থানীয়রা সতর্ক করে বলেন, যদি না কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়, তাহলে মাদক যেকোনো মুহূর্তে যুব সমাজের ওপর আরও ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে।
রোটারিয়ান রাতুল চৌধুরী বলেন, আগে স্কুল কলেজ ছুটির সময় পুলিশের টহল জোরদার করা হতো। তা কন্টিনিউ করা জরুরী। কারণ রাস্তাঘাটে এখন বখাটেদের উৎপাত বেশি। আর এরা বেশিরভাগই মাদকাসক্ত।
যুব সংগঠক কামাল আহমেদ দূর্জয় বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত করতে পারলে মাদকাসক্ত যুব সমাজের সংখ্যা কমে যাবে।
জাসাস নেতা শাহ আজমল আলী ও সিলেটের নন্দিত বাউল শিল্পী কালামিয়া বলেন,মাদক থেকে যুব সমাজকে ধরে রাখতে সুস্থ ও সংস্কৃতি দ্বারা অব্যাহত রাখতে হবে। আকৃষ্ট করতে হবে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুব সমাজ কে। সরকারিভাবে বেশি করে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা করতে হবে ব্যাপকভাবে।
লাউয়াই নুরজাহান মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার বলেন, পুলিশ পুরোপুরি একটিভ না হওয়ায় রাস্তা ঘাটে বেহায়াপনা বাড়ছে। এতে অনিরাপদ রয়েছে শিক্ষার্থীরা। দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায়
জনসাধারণ কে নানা রকম দুর্ভোগ উপহার হচ্ছে। মাদকাসক্তরাই রাস্তাঘাটে নারী সমাজের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজনীয়। স্কুল কলেজ এলাকায় পুলিশের বিশেষ টহল এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি রায় বলেন, আমি মাস আই শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি অভিভাবকদের নিজ নিজ বাচ্চারা কোথায় যাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সকলকে মাদকের ব্যাপারে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে বলেছি। মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কাজ করছি।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার -২ সিলেট মেট্রোপল্টন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক ও জেলার আরিফুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সুরমা থানার মাদক মামলায় আসামীরাঃ ১। সমুজ আলী (৫০), পিতা-মৃত তবারক আলী, ২। হাসনা বেগম (৪০), স্বামী-সমুজ আলী, উভয় সাং- হিলু রজীবাড়ি, থানা-দক্ষিণ সুরমা, জেলা-সিলেট। চলতি বছরের ৬ নভেম্বর তাদেরকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। ঐদিন মামলার ধার্য তারিখ কোটে। তবে আটকের পর থেকেই থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে সবুজ আলীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য উকিলপাড়ায় ঘুরছে প্রভাবশালীরা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।