ময়নুল হক পবন। চাকুরীতে প্রবেশের পর দীর্ঘ ৩৬ বছর কেটে গেলেও ন্যায্য পদোন্নতি বঞ্চিত ফরেষ্টারগন এতদিন ছিলেন অবহেলিত। বিগত ৩৬ বছরে বিভিন্ন সরকারের আমলে সরকারের উচ্চ মহলে দেনদরবার করার পরও তারা ছিলেন উপেক্ষিত। অবশেষে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার বঞ্চিত ফরেষ্টারদের ন্যায্য দাবী আমলে নিয়ে সারা দেশের ৪ শ ৫৩ জন ফরেষ্টারকে পদোন্নতি দিয়ে করেছেন ডেপুটি রেঞ্জার। ডেপুটি রেঞ্জার করায় ৪ শ ৫৩ জনের অনেকেই এখন পদোন্নতি পেয়ে এসিএফ(সহকারী বন সংরক্ষক) এর মতো উধর্বতন পদে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সারাদেশের ৪ শতাধিক বন কর্মকর্তার মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা ।
এব্যাপারে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাংলদেশ ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আব্দুল আহাদ জানান,তিনিসহ সারা দেশের ৪ শত ৫৩ জন বন কর্মকর্তা ৩৬ বছর পূর্বে ফরেষ্টার পদে যোগদান করেছিলেন। একই পদে ৩৬ বছর চাকুরী করে অনেকে অবসর নিয়েছেন এবং অনেকের অবসরের সময় চলে আসছে। বনের উর্ধবতন পদে পদোন্নতির বিধান থাকলেও ফরেষ্টার পদ থেকে অজ্ঞাত কারনে পদোন্নতি না দিয়ে বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের কর্মকর্তারদেরকে বঞ্চিত করে রাখে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন,বিভিন্ন সরকারের সময় পদোন্নতির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করলেও লাভ হয়নি। কোন সরকারই আমলে নেয়নি আমাদের দাবি। তিনি বলেন,আমি নিজে ১০৮৯-৯০ অর্থবছরে ফরেষ্টার পদে চাকুরীতে যোগদান করে প্রায় ৩৬ বছর একই পদে চাকুরী করছি। আমার যথাসময়ে পদোন্নতি হলে আমি এতোদিনে সহকারী বন সংরক্ষক থাকতাম। তিনি বলেন,এর পরও বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঐকান্তিক সানুগ্রহে এবং প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় আমাদের ফরেষ্টারগনের ৩৬ বছর পর পদোন্নতির জট খুলায় উনাদেরকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জানা যায়, বিগত ৩ যুগ থেকে ফরেষ্টার থেকে ডেপুটি রেঞ্জার হওয়ার জন্য সারা দেশের ফরেষ্টারগন স্মারকলিপি প্রদানসহ বিগত সরকারের মন্ত্রী, সচিব,সিসিএফ,সিএফসহ সংশ্লিদের বরাবরে আবেদন নিবেদন করলেও অজ্ঞাত কারনে দাবীটি ছিল উপেক্ষিত। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বতমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে সাক্ষাৎ করে দাবী তুলে ধরেন ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পরিবেশ,বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা, প্রধান বন সংরক্ষকসহ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টরা বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের কর্মকর্তাদের দাবীকে আমলে নিয়ে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং গত সপ্তাহে পদোন্নতির বিষয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। আর মন্ত্রনালয়ের এ সিদ্ধান্তের ফলে মাঠ পর্যায়ের বনের এ কর্মকর্তাগন বনবিভাগের উর্ধবতন পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা সুনামগঞ্জ সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হলো ফরেষ্টারদের ডেপুটি রেঞ্জার পদে প্রমোশন। আমরা বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন,ভূতাপেক্ষ হিসাবে আমাদেরকে ৫ বছর পূর্ব থেকে ডেপুটি রেঞ্জার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের চাকুরীর মেয়াদও বেশিদিন নেই। তাই আমাদেরকে দ্রুত চাকুরীরির নীতিমালা মোতাবেক উর্ধতন পদে পদোন্নতি দেয়া হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এব্যাপাওে বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মনিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন,‘সারাদেশের ফরেষ্টারগনের পদোন্নতি আটকা ছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে। বর্তমান পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের ঐকান্তিক সানুগ্রহে ৩৬ বছর থেকে বঞ্চিত ফরেষ্টাররা ডেপুটি রেঞ্জার হয়েছেন।’ তিনি বলেন, অনেকের চাকুরীর মেয়াদ শেষের পথে । এরপরেও অবসরে যাওয়ার পূর্বে পদোন্নতি লাভ করায় তারা ডিপার্টমেন্টের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।