ভুতে ধরা নাকি মানসিক রোগ?
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে ভূত-প্রেত, জ্বিন, কালো যাদু নিয়ে শতাব্দীর পুরোনো লোকবিশ্বাস প্রচলিত। ছোটবেলা থেকেই এসব গল্প শুনে বড় হওয়ায় মানসিক অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে মানুষ সহজেই তাকে “ভুতে ধরা” বলে ব্যাখ্যা করে।
অদৃশ্য রোগ ও সামাজিক কলঙ্ক
শারীরিক অসুস্থতা চোখে দেখা যায়, কিন্তু মানসিক অসুস্থতা ভেতরের পরিবর্তন—যা সরাসরি ধরা যায় না। এজন্য মানুষ সেটিকে মানতে চায় না। আবার সমাজে কলঙ্কের ভয়ে পরিবারগুলো মানসিক রোগকে গোপন রাখে, যাতে কেউ “পাগল” তকমা না দেয়।
পূর্বপুরুষের পাপের ফলের ধারণা
অনেকেই মানসিক রোগকে পূর্বপুরুষদের পাপের ফল মনে করেন। এর ফলে রোগী ও পরিবারকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। ভবিষ্যতে বিয়েশাদি অনুষ্ঠানে সমস্যা হবে ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন। এই সামাজিক চাপের কারণে পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনের অসুস্থতা স্বীকার করতে চায় না। বরং অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঝাড়ফুঁক, কালো যাদু বা তাবিজ-টোটকার শরণ নেন, যদিও এগুলো কোনো কার্যকর চিকিৎসা নয়।
সমাধান: সচেতনতা ও চিকিৎসা
মানসিক রোগও অন্য শারীরিক রোগের মতোই বৈজ্ঞানিকভাবে নিরাময়যোগ্য। আধুনিক চিকিৎসা, পরামর্শ ও ওষুধের মাধ্যমে রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। তাই কুসংস্কার ভেঙে চিকিৎসকের শরণ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পথ।
ভুতে ধরা নয়, মানসিক রোগকে রোগ হিসেবেই দেখা উচিত। সামাজিক কলঙ্ক নয়, সহমর্মিতা ও সচেতনতা দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিতে হবে।
ডা. সাঈদ এনাম
সহযোগী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি
ইন্টারন্যাশনাল ফেলো
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।