স্টাফ রিপোর্টার : বিশাল পরিসর, প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ৪৩ বছরেও আবার চালু হলো না মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমান বন্দরটি।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের বৃহত্তম এ বিমান বন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়।
১৯৯৫ সালে বেসরকারিভাবে অ্যারোবেঙ্গল এয়ার সার্ভিসের ফ্লাইট চালু হলেও যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে না পারায় পরবর্তীতে এর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, স্বাধীনতার পর নাম পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো সরকারই বিমানবন্দরটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা বাগানের ৬শ ২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মিত হয় এ বিমানবন্দরটি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা এই বিমানবন্দরটি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করে।
১৯৬৮ সালে একটি দুর্ঘটনার পর বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ৪৩ বছর অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে ঐতিহাসিক এই বিমানবন্দরটি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে বিমান বন্দরের রানওয়েসহ বিভিন্ন নিদর্শন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। এই রানওয়েতে গত দুই বছর ধরে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানগুলো নির্বিঘেœ অবতরণ করছে।
জানা গেছে, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার (বার্মা) ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে একসঙ্গে বড় যে দু’টি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে কমলগঞ্জের শমসেরনগর বিমানবন্দর।
তৎকালীন সময়ে বিমান বন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়- ‘শমসেরনগর বিমানবন্দর’।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বিমান বন্দরের সৈনিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেকগুলো বাংকার ও টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তান আমল এমনকী দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এগুলো অক্ষত ছিল।
কিন্তু, ১৯৭০ সালে পিআইএর অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইট সিলেট বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শমসেরনগর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে রানওয়ের কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
বিমান বন্দরের ভেতরে সে সময় অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বিমান বন্দরের বেশকিছু অবকাঠামো পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
তারপর ১৯৭৫ সালে এই বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। পরবর্তী সময়ে এখানে বিমান বাহিনীর একটি পরীক্ষণ স্কুল স্থাপন করে চালু করা হয় বার্ষিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তখন থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে।
বর্তমানে বিমানবন্দরের অবহেলিত ও পতিত ভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষি খামার। এখানে বিমানবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট অফিসও খোলা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে রানওয়ের অল্প কিছু অংশ।
বিমানবন্দরটিতে প্রতিবছর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জাতীয় ক্যাডেট কোর বিমান শাখার সদস্যদের অগ্নিনির্বাপন, প্রাথমিক চিকিৎসা, রাডার নিরাপত্তা, ফায়ারিংসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী বেসরকারিভাবে অ্যারোবেঙ্গল এয়ার সার্ভিসের ফ্লাইট চালু করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে এই ফ্লাইট সার্ভিসটি যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। পরবর্তীতে এর সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুুরুত্বও রয়েছে।
বিমান বন্দরটি চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠবে ও এ এলাকার যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।