নবীন চন্দ্রের বসতভিটায় একদিন। করেরগ্রাম, কুলাউড়া,
হেমন্তের এক শেষ বিকেলে নবীন চন্দ্র করের বাড়ীটা দেখার জন্য ঘর থেকে বের হলাম।
স্নেহভাজন জহিরুল ইসলাম এশু কে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলাম কুলাউড়া শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে করেরগ্রামে। একসময় হয়তো এখানে কর সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রভাব ছিল, আর সেজন্যই সম্ভবত গ্রামের নাম হয়েছে করেরগ্রাম।
শহরের পীচঢালা পথের মতো পথ ধরে চললেও রাস্তার দুপাশে ছিল চমৎকার গ্রামীণ ছোঁয়া।
মিনিট বিশেক পরেই পৌঁছে গেলাম নবীন চন্দ্র করের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়ীতে। প্রবেশ পথেই দেখলাম একটা মসজিদ এবং পাশেই একটা মন্দির। মন্দিরের গায়ে লিখা আছে….. “স্বর্গীয় নবীন চন্দ্র কর
মৃত্যু- ১৩৩৬ বাংলার ৬ই চৈত্র”!
এই মন্দিরটি নবীন চন্দ্র করের শ্মশানমন্দির। মৃত্যুর পর নবীন চন্দ্রের শেষকৃত্য এখানেই হয়েছিল। মন্দিরটি তাই স্মৃতিচিহ্ন হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
নবীন চন্দ্র কর এক সময় জমিদার ছিলেন। উনার মৃত্যুর পর উনার সন্তানদ্বয় ললিতমোহন কর এবং নলীনী মোহন কর এ বাড়ীতেই থাকতেন।
১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর উনারা ভারতের ধর্মনগরের চন্দ্রপুর চলে যান। চন্দ্রপুরে অবস্থানরত কৈলাশরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কলিম চৌধুরীর সাথে আসাম প্রদেশের এমএলএ ললিতমোহন করের ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেই সুবাদে পারস্পরিক বিনিময় চুক্তি হয়। ধর্মনগরের চন্দ্রপুর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কলিম চৌধুরী পরিবার পরিজনসহ চলে আসেন করেরগ্রামে এবং ললিতমোহন কর সপরিবারে চলে যান চন্দ্রপুরে। কলিম চৌধুরীর বংশধররা এখন দেশে বিদেশ সুপ্রতিষ্ঠিত। বাড়ীতে উনারা মাঝে মধ্যে আসেন।
বাড়ীতে ঢুকতেই দেখলাম বাড়ীর সামনে বিশাল দীঘি। দীঘি দেখেই মনে হলো এক সময় নবীন চন্দ্র কর খুব প্রভাবশালী ছিলেন। বাড়ীর সামনের কারুকার্যময় বিশাল পিলার দিয়ে গড়ে তোলা ফটকে জমিদারীর ছাপ। কয়েক চাল বিশিষ্ট প্রকান্ড বসতঘর। এখানেই উনি বাস করতেন। বসতভিটার উত্তরপাশে পূজার ঘর। পূজো ঘরের সিঁড়িতে হাতির মস্তকের ভাস্কর্য এখনও রয়ে গেছে।
সারা বাড়ীটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
বিশাল এরিয়া নিয়ে বাড়ীটা। বাউন্ডারি ওয়ালটা এখন আর নেই।
আগেকার যুগের জমিদারদের প্রভাব প্রতিপত্তি আর সৌখিনতার ছাপ পুরো বাড়ী জুড়ে এখনও আছে। তবে এ বাড়ীতে এখন যারা আছেন তাদের দায়িত্ব বাড়ীটাকে আরো সংস্কার করা।
এই গ্রামেই নবীনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রধানশিক্ষক প্রাণেশ কর স্যারের বাড়ী। সেই বাড়িটাও দেখে এলাম। প্রাণেশ কর স্যার ললিতমোহন করদের আত্মীয় ছিলেন। প্রানেশ স্যারও একসময় ভারতে চলে যান।
পূর্ব প্রজন্মের কেউ আর এখানে নেই… আছে শুধু তাদের স্মৃতি। সেই স্মৃতিচিহ্ন যেন আমরা হৃদয়ে ধারণ করতে পারি এইটুকুই প্রত্যাশা।
তথ্য ও ছবিঃ Shipar Ahmed
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।