
স্টাফ রিপোর্টার। হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদী সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার জলাশয়গুলো পলি জমে ক্রমেই নাব্যতা হারাচ্ছে। জেলার প্রধান নদী মনু—যা কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত—উজানের ভারত থেকে নেমে এসেছে কুলাউড়ার শরীফপুর হয়ে, প্রায় ৭৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মনুমুখ এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। দীর্ঘদিন খনন না হওয়া এবং ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় পলি জমে নদীটির গভীরতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে নদীতে চর জেগে উঠছে, আশপাশের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি ঝুঁকিতে পড়ছে, এবং দেশীয় মাছের উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে।
সরেজমিনে পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ধলিয়া, সুখনাভী, রাজাপুর, কটারকোনা, ইসমাইলপুর, রনচাপ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় দেখা গেছে, মনু নদীর তলদেশে বিশাল চর গড়ে উঠেছে। এসব চরের কারণে গত বর্ষায় বেড়িবাঁধের শিকরিয়া এলাকায় প্রায় ৩০০ ফুট ভাঙন দেখা দেয়। ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও শালন এলাকায় নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় কৃষক তাজু মিয়া, মোবারক আলী, ইসমাইল আলী, আব্বাস আলী ও ফরিদ আহমদ বলেন, “নদী খনন না হওয়ায় পলিতে নদী ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীর পানি বাড়লেই বন্যা হয়, কৃষিজমি ও ফসলের ক্ষতি হয়। আগে এই নদীতে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, এখন পলিতে ঢহর ভরাট হয়ে মাছও পাওয়া যায় না।”
রাজাপুর খেয়াঘাটের মাঝি রুবেল আলী ও ধলিয়া ঘাটের মাঝি হারুন মিয়া জানান, “নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌকা চালানো যায় না। শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন পারাপার করেন, বর্ষায় বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি উপচে যায়।”
কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, “মনু নদী, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল পলিতে ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমছে। এতে দেশীয় মাছের উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। মনু নদী ও সংশ্লিষ্ট জলাশয় খননের প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ জানান, “বিগত সময়ে কিছু এলাকায় পলি অপসারণ করা হয়েছিল। নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলো অপসারণ ও পূর্ণাঙ্গ খনন প্রকল্পের প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, “স্থানীয়দের আবেদন অনুযায়ী পলি অপসারণ, বেড়িবাঁধ মেরামত ও নদী খননের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, যাতে মনু নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায়।”
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।