
ওসমানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন ৷ তাছাড়া ফ্রান্সের জলাভূমিতে থাকা পাকিস্তানের ডুবোজাহাজের কিছু সংখ্যক কর্মীও মুক্তিবাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন৷ কিছুদিন পর এম. এ. জি. ওসমানী তাদের এবং কিছু সংখ্যক গেরিলা যুবক নিয়ে একটি নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠন করেন । আগস্টের মাঝামাঝিতে তাঁরা নদীপথে শত্রুর চলাচল প্রায় রুদ্ধ করে দেন । নৌবাহিনী গঠনের ফলে একটা বড় ধরনের সংকটের অবসান হলেও দেশ স্বাধীন হবার আগে আগে আরও একটা সঙ্কট এম. এ. জি. ওসমানী অনুভব করেন । সেটা হচ্ছে তাঁর হাতে কোনো বিমানবাহিনী ছিল না । শেষের দিকে দুটি হেলিকপ্টার, ও একটি অটার আর তাঁর নিজের চলাচলের জন্য একটি ডাকোটা নিয়ে ছোট্ট একটি বিমানবাহিনী গঠন করেছিলেন তিনি ৷
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ
পাকিস্তানী বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরকি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী অনুপস্থিত ছিলেন । আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানী উপস্থিত না থাকার কারন ছিল আর্মি প্রটোকল ।আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ব ফ্রন্টের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা । অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব ফ্রন্টের প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজী । এরা দুজনেই ছিলেন আঞ্চলিক প্রধান । অন্যদিকে ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান । তাই সেনাবাহিনীর প্রটোকল রক্ষার্থে কোন সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক প্রধানের সাথে তিনি কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন না । ওসমানি নিজেই এ বিতর্কের জবাব দিয়ে গেছেন ।
যুদ্ধপরবর্তী জীবন
১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তাঁকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া হয় । ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন, মন্ত্রীসভায় যোগ দেন অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে । ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ ঐ নির্বাচনে ওসমানী তাঁর নিজের এলাকা থেকে অংশ নেন এবং নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন ৷ ১৯৭৩ এর নির্বাচনে ওসমানী ৯৪ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন ৷ ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন ।
১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন । ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তিনি সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সেবছর ২৯শে আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান, তবে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন।
১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওসমানী ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন । ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন ।
নির্বাচনে যে ১০জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেনঃ
১। জনাব আজিজুল ইসলাম ২। জনাব আবুল বাশার ৩। প্রিন্সিপাল এ, হামিদ (এম.এস.সি) ৪। হাকিম মাওলানা খবিরুদ্দিন আহমেদ ৫। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (বি,ইউ, পি,এস,সি) ৬। জেনারেল (অবঃ) মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানি ৭। জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ ৮। জনাব মোঃ গোলাম মোর্শেদ ৯। শেখ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ১০। সৈয়দ সিরাজুল হুদা
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জেনারেল (অবঃ) এম.এ.জি. ওসমানী অংশ নেন । তিনি জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন । তিনি মনোনীত হয়েছিলেন,গণ ঐক্য জোট এবং ৫টি রাজনৈতিক জোটের যথাঃ জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর), বাংলাদেশ পিপলস লীগ, গণ আজাদী লীগ। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ।
ওসমানী মৃত্যুবরণ
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন থাকাকালীন ১৯৮৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এম. এ. জি. ওসমানী মৃত্যুবরণ করেন । তাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটে সমাহিত করা হয় ।
স্বীকৃতি
তাঁর স্মরণে ঢাকায় গড়ে উঠেছে ‘ওসমানী উদ্যান’ ও স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’৷ এছাড়া তাঁর সিলেটস্থ বাসভবনকে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে৷ সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তাঁর নামে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৷
তথ্যসূত্র
বঙ্গবন্ধু হ্ত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস্ এণ্ড ডকুমেন্টস্, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রকাশক সেলিম হাসান তরফদার, ৪র্থ সংস্করণ ৯৪ খ্রিঃ
সিলেটের দুইশত বছরের আন্দোলন, তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশক: ওসমান গণি, আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রকাশকাল: ১৯৯৫ । সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত, মোহাম্মদ মুমিনুল হক, প্রকাশক সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিচার্স ইউ, কে, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১ পৃষ্ঠা ১৫ ।
গুণীজন.অর্গ ওয়েবসাইটে মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী এর জীবনী । বাংলাদেশের ডায়েরী, “স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যূদয়, ৩১১ সংস্করণ: ৭১৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক, গ্লোব লাইব্রেরী (প্রাঃ) লিমিটেড ঢাকা, আগস্ট ২০০২ । একাত্তরের রণাঙ্গনের অকথিত কিছু কথা – নজরুল ইসলাম,মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে জনসংযোগ কর্মকর্তা । কুলাউড়ার দর্পণ রির্পোট
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।