1. kulauradorpon@gmail.com : কুলাউড়ার দর্পণ : কুলাউড়ার দর্পণ
  2. info@www.kulaurardarpan.com : কুলাউড়ার দর্পণ :
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ”বেটা কইলে মামন্দ মনসুর, আর যত পুয়া হাওর কইলে হাকালুকী, আর যত পুয়া” কুলাউড়ায় ১ নভেম্বর রেলপথ অবরোধের সমর্থনে লাল পতাকা মিছিল কুলাউড়া (সৈয়দ আকমল হোসেনের জীবনীর ছোট্ট একটা গল্প) বর্তমান বহুল পরিচিত সৈয়দ বাড়ি  সৈয়দ আকমল হোসেন : সংগ্রামই ছিল তাঁর জীবন নীরবে চলে গেল ‘কুলাউড়ার ভাসানী’ ও ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেনের  চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তার ‘নিখোঁজের’ ৬ বছর পর কুলাউড়ার আবদুল আহাদ মরদেহ মিললো ফেনীতে কুলাউড়ার রাউৎগাঁও পীরের বাজারে বিট পুলিশিং সভা: চুরি ও কিশোর গ্যাং দমনে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি ড্যাবের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হলেন কুলাউড়ার ডা. শাকিল কুলাউড়ায় গলায় ফাঁ*স দিয়ে এক গৃহবধূর আ*ত্ম*হ*ত্যা

কুলাউড়া (সৈয়দ আকমল হোসেনের জীবনীর ছোট্ট একটা গল্প) বর্তমান বহুল পরিচিত সৈয়দ বাড়ি 

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

সৈয়দ শাকিল আহাদ।। কুলাউড়ার পূর্বদিকে দানাপুর, দতরমুরি, লষ্করপুর, কামারকান্দি, ঘাগটিয়া, রঙ্গীরকুল বিজয়া, দিলদারপুর, ক্লিবডন, গাজিপুর এবং আশেপাশের গ্রাম ও চা-বাগানগুলোর অনেক তথ্যই বর্তমান প্রজন্মের কাছে অজানা। যুদ্ধকালীন সময়ে প্রথম যখন গাজিপুর যাই, সেই স্মৃতিও বেশ মধুর। রাস্তার দুই ধারে ফসলের মাঠ, বড় বড় গাছগাছালি পরিবেষ্টিত সড়ক — সেই সড়কটি ছিল পাথরের নুড়ি বিছানো। উঁচু-নিচু রাস্তায় রিকশাই ছিল অন্যতম বাহন। বাগানের কিছু জীপ ও ট্রাক্টরও মাঝে মাঝে চলতে দেখা যেতো। তবে সচরাচর সাইকেলে চড়ে ও পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যেত বেশি।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ ওয়াহিদ মুরাদের লেখা “ইতিহাসের দর্পণে কুলাউড়া” নামক বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশী ও তোয়ারিখে সাহাবউদ্দিন পাশা নামক দুইটি বই থেকে জানা যায়, হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর নির্দেশে শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশী (রঃ) নামে একজন দরবেশ লংলা পরগনায় এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি ছিলেন চৌকি পরগনার শাহ তাজ উদ্দিন কুরেশীর ভাই। সেই সময়ে লংলা অঞ্চলে পাহাড়িয়াদের প্রাধান্য ছিল। লংলা অঞ্চলটি তখন নামে মাত্র সিলেটের অধীন ছিল; সিলেট তখন গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ত্রিপুরার রাজার কর্তৃত্বে ছিল।”

তখন শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশী লংলার একটি পাহাড়িয়া এলাকায় ভয়ংকর স্থানে বসবাস শুরু করেন ও আরাধনায় নিমগ্ন হন। জনশ্রুতি আছে, একদিন সকালে বনের মধ্যে শাহ হেলীম উদ্দিন রোদ পোহাচ্ছিলেন — তাকে ঘিরে ছিল কয়েকটি বাঘ। এই দৃশ্য দেখামাত্রই আশেপাশের লোকজন ভয়ে এই এলাকা ছেড়ে লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়। একদিন এক অসুস্থ হিন্দু মহিলা এই দরবেশের কাছে এসে রোগমুক্তি কামনা করেন। তিনি তখন আল্লাহ পাকের নামে নিজের হাতের একটি ফল খেতে দেন। ফলটি খেয়ে কিছুক্ষণ পর মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ঐ মহিলাটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে হযরত শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশী তাকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই ছেলে হয় — ওয়েজউদ্দিন ও তয়েজউদ্দিন।

দরবেশ হযরত শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশীর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর অধিকারভুক্ত জমির মধ্যাংশে একটি বিশাল দীঘি খনন করেন এবং দীঘির উত্তরাংশ ওয়েজউদ্দিন ও দক্ষিণাংশ তয়েজউদ্দিনকে ভাগ করে দেন। এই দীঘিটি আজও “হদের দীঘি” নামে পরিচিত। ঐ দীঘির পাশে শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশীর মাজার রয়েছে। বর্তমান কুলাউড়া রবিরবাজার সড়কের পশ্চিম পাশে ও ফানাই নদীর দক্ষিণে এই মাজার ও দীঘির অবস্থান।

শাহ হেলীম উদ্দিন কুরেশীর অধঃস্তন বংশধরদের মধ্যে অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। এই বংশের অনেকেই কিয়াতলা, কাদিপুর, জয়পাশা, নজাতপুর, রাউৎগাঁও, কর্মধা, পৃথিমপাশা, ঘাগটিয়া প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন।

জনশ্রুতি আছে — ওয়েজউদ্দিন ও তয়েজউদ্দিনের মধ্যে জমি ভাগ হওয়ার পর এর উত্তরাংশ উত্তর লংলা এবং দক্ষিণাংশ দক্ষিণ লংলা নামে পরিচিত হয়। ওয়েজউদ্দিনের পুত্র বুরহান উদ্দিন তার একমাত্র চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন।

বুরহান উদ্দিন ও নুরউদ্দিনের সময় সিলেটের শাসনকর্তার সঙ্গে ত্রিপুরার রাজার বিরোধ বাধে। সিলেটের শাসনকর্তার পক্ষে বুরহান উদ্দিন ও নুরউদ্দিন বীরত্ব দেখান। এই কারণে দিল্লীশ্বর তাদের “খান-ই-খানান” উপাধি দান করেন। নুরউদ্দিনের পুত্র জালাল উদ্দিন, দরিয়া উদ্দিন ও বরকত উদ্দিনের মধ্যে জালাল উদ্দিন ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তি। দিল্লির রাজ দরবার থেকে তিনি “মজলিশ জালাল খান” উপাধি লাভ করেন।

তাঁর পুত্র গওহর খাঁ, গওহর খাঁর পুত্র গাজি খান ছিলেন সৌখিন বাঘ শিকারি। দিল্লির এক শাহজাদা একবার শ্রীহট্ট ভ্রমণে এলে গাজি খান তাঁর শিকারের সঙ্গী হন। গভীর জঙ্গলে শিকারের অপেক্ষাকালে একটি বাঘ এসে তাদের হাতিকে আক্রমণ করে। তখন গাজি খান অসীম সাহসের সঙ্গে বাঘটিকে গুলি করে হত্যা করেন। শাহজাদা দিল্লি ফিরে গিয়ে সম্রাটকে ঘটনা জানালে সম্রাট গাজি খানকে “গাজি শের খান” উপাধি ও সনদ পাঠান। তাঁর নামানুসারেই এলাকার নাম গাজিপুর হয়, যেখানে তাঁর মাজারও রয়েছে।

উল্লেখ্য, হযরত শাহ হেলীম উদ্দিন নারলুলী নামেও আরও একজন দরবেশ কুলাউড়ার পাহাড়িয়া অঞ্চলে মনু নদীর তীরে বসবাস করে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি অলৌকিক ক্ষমতায় হিন্দু রাজা কর্তৃক তাঁর রানী কনকরানী ও রাজকন্যা কমলাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন এবং রাজ্যের অংশ বিশেষ লাভ করেন, যা কনকহাটি বা কানিহাটী নামে পরিচিত। ঐ বংশেও অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন — যাদের নিয়ে আগামী পর্বে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।

কুলাউড়া রবিরবাজার রোডে শাহ হেলীম উদ্দিন (রঃ)-এর মাজারের একটু দক্ষিণে নর্তন গ্রামের আমঝুপ এলাকায় রেললাইনের পশ্চিমে রয়েছে সৈয়দ বাড়ি, যা নর্তন সৈয়দ বাড়ি নামে পরিচিত। নয়নাভিরাম এই বাড়িটি মূলত একজন পীর সাহেবের বাড়ি — তাঁর নাম ছিল সৈয়দ আবুল বাশার মোহাম্মদ রেজওয়ান, যিনি এলাকায় “রেজান পীর” নামে সুপরিচিত ছিলেন।

তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পূর্ণ একজন সাধক ছিলেন — গতানুগতিক দাড়ি-টুপি-আলখেল্লা না পরে প্যান্ট, শার্ট, স্যুট পরতেন। তাঁর পিতা সৈয়দ রমুজ আলীও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও মজ্জুব প্রকৃতির মানুষ।

রেজান পীর সাহেব বিয়ে করেছিলেন আমার আব্বার এক মামাতো বোন সৈয়দা তহুরা আখতার খাতুনকে, যিনি হবিগঞ্জের সুলতানশী হাবেলির সৈয়দ আব্দুস সালাম সাহেবের ছোট মেয়ে।

সৈয়দ এ.বি.এম. রেজওয়ান সাহেব সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে — তিনি বাঘের সঙ্গে কথা বলতেন! রাতের বেলা খাবার খাওয়ার সময় কিছু দূরে গিয়ে কারও সঙ্গে বসে খেতেন, কিন্তু খাবার শেষে সেই আগন্তুককে আর দেখা যেত না। অনেক ভক্তের মতে, তিনি একসঙ্গে একাধিক ভক্তের বাড়িতে দাওয়াত খেতেন — যা ছিল এক অলৌকিক ঘটনা।

রেজান পীর সাহেবের মাজার, মসজিদ ও সৈয়দ বাড়ি নামে একটি ডাকঘরও আজও রয়েছে।

পীর-আওলিয়া পরিবেষ্টিত এই কুলাউড়ার নর্তন সৈয়দ বাড়ির প্রধান ব্যক্তি সৈয়দ রেজওয়ান আলী ওফাত হন ১৯৭০ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ফলে ৭১-এর যুদ্ধ চলাকালে বাড়ির সব সদস্য ঢাকায় থাকায় আমি আর ছোট মামা মনির আলম একবার সেখানে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ফিরে আসি।

পরবর্তীতে তাঁর কনিষ্ঠ ছেলে সৈয়দ এ.বি.এম. মান্নানও অত্যন্ত আমলদার ও ধার্মিক ছিলেন। বর্তমানে তাঁর বড় ছেলে সৈয়দ এ.বি.এম. হান্নান এই বিশাল অবিভক্ত সৈয়দ বাড়ির গদ্দীনশীন।

অত্যন্ত সুন্দর ছিমছাম ঐ সৈয়দ বাড়ির সামনে দিয়ে সংগ্রামের সময় ট্রেনে করে যাবার কালে বহুবার চেষ্টা করেছি লংলা স্টেশনে নেমে ঐ বাড়িতে যাব, কিন্তু যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে বহুবার গিয়েছি এবং নর্তন সৈয়দ বাড়ির প্রচুর স্মৃতি বয়ে চলেছি — যা বলে শেষ করতে পারব না হয়তো।

বড়কাপন নামের একটি গ্রাম কুলাউড়ার ইতিহাসের অগ্নিসাক্ষী হয়ে আছে, কারণ এই বড়কাপনেরই ছেলে হচ্ছেন সৈয়দ আকমল হোসেন।

২….

সৈয়দ আকমল হোসেন: এক বিদ্রোহী জীবন

বড়কাপন গ্রামের সেই ছেলে — সৈয়দ আকমল হোসেন।

তিনি ছিলেন একজন সত্যিকার অর্থে জনগণের নেতা, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে কুলাউড়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য নাম।

১৯২৮ সালের দিকে তিনি বড়কাপন গ্রামের এক ধার্মিক ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ রমিজ উদ্দিন ছিলেন সমাজসেবক, ধার্মিক, প্রভাবশালী এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ।

সৈয়দ আকমল হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন আদর্শবাদী, ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। তিনি তাঁর সময়ের তরুণদের প্রেরণার প্রতীক ছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং রাজনীতির মঞ্চে পদার্পণ করেন একজন সমাজবিপ্লবীর মতো।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও ভাষা আন্দোলন

১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সিলেট ও কুলাউড়ার ছাত্র সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে।

তখনকার শাসকগোষ্ঠীর দমননীতি উপেক্ষা করে তিনি সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখতেন — তাঁর কণ্ঠে ছিল আগুন, তাঁর আহ্বানে ছিল মানুষ জাগানোর শক্তি।

এই সময় থেকেই মানুষ তাঁকে “বিদ্রোহী সৈয়দ” নামে ডাকতে শুরু করে.।

ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষক রাজনীতিতে ভূমিকা

৫০ ও ৬০ এর দশকে তিনি রাজনীতিকে জনসংযোগের মাধ্যম নয়, বরং জনসেবার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন।

তিনি গরিব কৃষক, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। জমি, মজুরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন কুলাউড়াসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে।

তিনি মওলানা ভাসানীর “ন্যায় ও বঞ্চিতের পক্ষে” দর্শনে বিশ্বাস করতেন — তাই তাঁকে কুলাউড়ার মানুষ ভালোবেসে “কুলাউড়ার ভাসানী” নামে অভিহিত করে।

নির্ভীক সংগ্রামী নেতা

তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ছিল পরিষ্কার — জনগণের পাশে, শোষণের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে।

শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়, দুর্নীতি বা রাজনৈতিক চাটুকারিতা তিনি কখনোই সহ্য করতেন না।

তাঁর বক্তৃতা ছিল প্রখর যুক্তিসঙ্গত ও নির্ভীক।

তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।

তাঁর বাড়ি ও দপ্তর সর্বদা মানুষের জন্য খোলা থাকত —

যে কেউ এসে সাহায্য চাইলে তিনি যথাসাধ্য করতেন, কারও মুখ ফিরিয়ে দিতেন না।

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দ আকমল হোসেন মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ান।

তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা, আশ্রয় ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।

বাড়িতে বহুবার পাকিস্তানি বাহিনী তল্লাশি চালায়, কিন্তু তিনি কখনো ভীত হননি।

এক সময় তাঁর ওপর নজরদারি বাড়ে, তবুও তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ চালিয়ে যান।

তাঁর নেতৃত্ব ও সাহসের কথা আজও কুলাউড়ার প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সংগ্রাম ও রাজনীতি

স্বাধীনতার পরও তিনি জনস্বার্থে নিরন্তর কাজ করেছেন।

ক্ষমতার মোহে পড়েননি — বরং জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব ও স্থানীয় উন্নয়নই ছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য।

তিনি গ্রামীণ উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উন্নয়নসহ নানা খাতে কাজ করেছেন।

কুলাউড়ার রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ছিল দৃঢ়, কিন্তু তিনি কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে আপস করেননি।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

“তিনি ১৯৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।”

তাঁর মৃত্যু কুলাউড়া ও আশপাশের মানুষের মনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে।

তাঁর নাম আজও উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় —

কারণ তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি সত্যিকার অর্থে জনগণের নেতা,

একজন “বিদ্রোহী সৈয়দ”,

একজন “কুলাউড়ার ভাসানী”।

তাঁর স্মৃতিচিহ্ন ও উত্তর প্রজন্ম

আজও কুলাউড়ার বড়কাপন গ্রামে তাঁর স্মৃতি বহন করে সেই বাড়িটি, সেই উঠান, যেখানে তিনি মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতেন।

স্থানীয় মানুষরা এখনও তাঁর নামে দোয়া-মাহফিল ও স্মরণসভা করে থাকেন।

তাঁর বংশধরেরা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত থেকে তাঁর আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখছেন।

ভাষার মাসে শ্রদ্ধা

ভাষার মাসে আমরা স্মরণ করি এই মহান ভাষাসৈনিক,

জননেতা, সমাজসংস্কারক ও মানবপ্রেমী সৈয়দ আকমল হোসেনকে।

তাঁর ত্যাগ, সাহস ও জনসেবার মনোভাব আজও আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

নীরবে চলে গেলেন “কুলাউড়ার ভাসানী” ও “বিদ্রোহী সৈয়দ” খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী।

ভাষার মাসে ভাষাসৈনিক এ মহান ব্যক্তিকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।✍️ লেখক: কুলাউড়ার দর্পণ, সম্পাদক, ষ্টাফ রিপোর্টার।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট