 
							
							 
                    
৭১ এর স্মৃতি -পর্ব ২৩ ( আমানীপুর )
সৈয়দ শাকিল আহাদ
কুলাউড়ার কৌলা,পৃথিমপাশা , ঘরগাও , পাল্লাকান্দি,কানিহাটি ছাড়া ও তার আশপাশের আরো কয়েকটি প্রসিদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য আত্বীয় বাড়ির সাথে সংগ্রামের সময় যোগাযোগের কথা মনে আছে ।
বিশেষ করে আমানীপুরের কথা ।
আমানীপুর সাহেব বাড়ি কুলাউড়ার দক্ষিন পু্র্বে টিলাগাঁও রেল য্টেশনের কাছে পাল্লাকান্দি থেকে মাইল খানেক দুরে , সবুজে ছড়ানো পাহাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত ।
কুলাউড়া থানার টিলা গাঁও ইউনিয়নের অনেক গুলো গ্রাম , যেমন , লাল বাঘ , আস্রয় গ্রাম ,নয়াপতন, যাদবপুর,বালিয়া,তাজপুর,গন্ডারগড়,
পুরিগ্রাম,দুন্দালপুর,খন্দকারের গ্রাম,শাহাজাদপুর,জালালপুর,সন্দারাজ,ডরিতাজপুর,
ইফসুবপুর,বাদেস্যালন,বালিয়া,বিজলী, শাহাপুর,চানপুর,সুজাপুর,লালপুর,মীরপুর,ছালামতপুর,কালামপুর,বালিসিন্দি,মোবারকপুর ,নৈমপুর,কাজিরগাঁও ,লহরাজপুর,বৈদ্যশাসন,পাল্লাকান্দি,পূর্বহাজিপুর,মুহিবনগর,
আমানীপুর ইত্যাদি গ্রামগুলো সবুজে ঘেরা ,এরই মধ্যে ছবির মত সাজানো একটি গ্রামের নাম আমানীপুর ঐ গ্রামেই একটি সুবিশাল সাহেব বাড়ী রয়েছে , যে বাড়িতেই একবার যাবার সুযোগ হয়েছিল , বাড়ির সামনে শাহ মতিউল্লাহ (রঃ) এর মাজার একটি দিঘী, মসজিদ এবং মসজিদ সংলগ্ন একটি পুকুর ছিল যার স্বচ্ছ টলটলে পানি পান করতো সমগ্র গ্রামবাসী ঐ পুকুরে শুধু অযু করতে পারতো সবাই , অন্য পুকুরটিতে গোসল করতে হতো এবংঅতি প্রাচিন কালে প্রতিষ্ঠিত একটি টি টাইপের বাংলো , যা কালের স্বাক্ষী বহন করে আজও অনেক স্মৃতি রোমন্থন করে চলেছে ।
বাবা হযরত শাহজালাল ( রঃ) এর সাথে আগত ৩৬০ আওলিয়ার অন্যতম হবিগঞ্জের হযরত সৈয়দ নাসিরুদ্দিন সিপাহসালাহ এর পরবর্তী ১২ তম পুরুষ শাহ সৈয়দ ইকরামুল্লাহ অবস্তান করেন পাল্লাকান্দিতে আর তার অপর ভাই শাহ সৈয়দ ইনামুল্লাহর ও তার পরবর্তী বংশধরগন এই আমানীপুর সাহেব বাড়িতে অবস্তান করেন ।
সৈয়দ ইনামউল্লাহর প্রৌপুত্র সৈয়দ বুরহানউদ্দিন ,তার তিন ছেলের মধ্যে সৈয়দ রেহানউদ্দিন ও সৈয়দ জাফরউদ্দিন বিয়ে করেন কুলাউড়ার কৌলার সৈয়দ বশিরুল হোসেন এর চাচা সৈয়দ সমদুল হোসেনের দুইকন্যা যথাক্রমে নজিবুন্নেছা ও তালেবুন্নেছা কে ,সৈয়দ রেহানুদ্দিনের মেয়ে মজিবুন্নেছার বিয়ে হয় কানিহাটির আব্দুল মান্নান চৌধুরী সাহেবের সাথে , আব্দুল মান্নান চৌধুরী ছিলেন ১৯৩০-১৯৪০ সালে অবিভক্ত ভারতের সাউথ সুরমা ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বৃটিশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান , তিনি তৎকালিন সময়ে আই এল ও কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং অসুস্তবোধ করলে চিকিৎসার জন্য ল্ন্ডনে অবস্তানকালে ইহলোক ত্যাগ করেন । তাকে লন্ডনেই সমাহিত করা হয় ।
সৈয়দ বুরহানুদ্দিনের আর এক ছেলে সৈয়দ আফতাব উদ্দিন । তার তিন ছেলের মধ্যে একছেলে সৈয়দ মিসবাহউদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন , তিনিই এই কুলাউড়া অন্চলের প্রথম বিচারপতি , তিনি একজন পরহেজগার , অমায়িক ও অত্যান্ত বিনয়ী চরিত্রের অধিকারী ছিলেন , তার ছেলে সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন একজন প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানীর উচ্চপদে ছিলেন এবং বর্তমানে ঢাকায় অবস্তান করছেন । তার চার মেয়ে যথাক্রমে সৈয়দা দীনা আহম্মেদ , সৈয়দা লিপু চৌধুরী, সৈয়দা তারানা ফারুক , সৈয়দা তামান্না কোরেশী ।
সৈয়দ মিসবাহউদ্দিনেরাও তিন ভাই , সৈয়দ মিতফাউদদিন ও সৈয়দ আহবাব উদ্দিন , সৈয়দ মিতফা উদ্দিনের ছেলে সৈয়দ মহিউদ্দিন হোসেন দীর্ঘদিন টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে ছিলেন এবং প্রচুর জনহিতকর কাজ করেছেন । এই বংশের অন্যান্য নারী সদস্যদেরও অনেক ভাল ভাল সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে হয়েছে এবং তারা স্ব স্ব স্হানে প্রচুর সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করেছেন ।
টিলা গাঁও ইউনিয়নের বাঘের টেকী নামক স্হানে , যা ব্রাহ্মন বাজার শমশের রোড়ের পাশ্বে অবস্থিত গাছ গাছালীতে ঢাকা একটি মাজার রয়েছে যাকে ‘বাঘের টেকীর মাজার’ বলা হয়ে থাকে ,ঐ মাজারটি কোন দরবেশের তা কেউ বলতে পারেন নাই তবে তিনি বাবা শাহজালাল (রঃ) এর সাথী বলে স্থানীয় ভাবে পরিচিতি রয়েছে ।
এই মাজারে এখনও অনেক লোক মাঝে মাঝে বাঘ দেখতে পান বলে জনশ্রুতি রয়েছে ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কুলাউড়ার সাথে টিলাগাও ,শরীফপুর , হাজিপুর ইউনিয়নের দুরত্ব বেশি থাকায় এই ইউনিয়ন তিনটির সব প্রকার কাজ কর্মই চলতো শমশেরনগরকে কেন্দ্র করেই । তাছাড়া তখন সড়ক পথের চেয়ে রেল পথই যোগাযোগের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পথ ছিল বলে সকলেই রেলপথকে সবার আগে বেছে নিতো।
এই অন্চলের ভানুগাছ , শমশেরনগর , মনু ,টিলাগাঁও , লংলা , কুলাউড়া, বরমচাল প্রভৃতি রেলস্টেশনে উল্লেখযোগ্য স্বরনীয় ঘটনা সমুহ ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে ।কিছু উল্লেখ যোগ্য ঘটনা রয়েছে শমশেরনগর , টিলাগাঁও রেল স্টেশন সমুহে ..
সংগ্রামের শুরুতেই পাকিস্তানী সৈন্যদের পৈশাচিকতার খবর শুনে জেনারেল আব্দুর রবের পরামর্শে তৎকালিন শমশেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহিদ ,ক্যাপটেন মোজাফ্ফর আহমেদ , আব্দুল গফুর ,সাজ্জাদুর রহমান ও আমজদ আলী প্রমুখ ব্যক্তি বর্গের উপস্হিতিতে শমশেরনগরে ছাত্রলীগ , আওয়ামী লীগ ও মুক্তি কামী জনগনকে নিয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে সীমান্ত ফাঁড়ী গুলোর বাঙ্গালী ই.পি.আরদের প্রতিরোধ সংগ্রামে শরীক হওয়ার জন্য আহব্বান জানানো হবে , সেই লক্ষ্যে নেতৃবৃনদ আলীনগর চা বাগানের ম্যানেজারের গাড়ীতে করে বিক্ষুব্ধ জনতার সমন্নয়ে ২৮ শে মার্চ প্রথমেই চাতলাপুর বাগানের ফাঁড়ীতে যান ।সেখানে ছিল দুইজন অবাঙ্গালী সৈন্য । বিক্ষুব্ধ জনতা সেই অবাঙ্গালী সৈন্যদের জবাই করে হত্যা করলে , সেখানকার ফাঁড়ীর সুবেদার শামসুল হক সহ সকল বাঙ্গালী সৈন্যরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্তান নেন এবং সবাই মিলে মোজাফফর আহম্মেদ এর নেতৃত্বে মুক্তি ফৌজ নামে একটি বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেন ।(চলবে)
নীরবে চলে গেল ‘কুলাউড়ার ভাসানী’ ও ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেনের
অতীতের গর্ব, আজকের প্রেরণা — সৈয়দ শাকিল আহাদের কলমে কুলাউড়ার উছলাপাড়ার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।