
“৭১ এর স্মৃতি – ১৯ ( মনসুর)
সৈয়দ শাকিল আহাদ ।
অনেক কথাই মনে হচ্ছে লিখি
কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা লিখবো ভাবছি , তবে মুক্তিযুদধ চলাকালে উছলাপাড়াতে আমার নানা বাড়ির পশ্চিমের দেওয়াড়ে উঠলেই দেখা যেত যে গ্রাম তা হচ্ছে মনুর বা মনসুর , এই গ্রামের দক্ষিন পাশে ঈদগাহ ও গোরস্তান , উত্তর পাশে কাদিপুর যাবার রাস্তা মাঝে গাং বা খাল বা মরা গুগালী গাং , বর্ষার সময় পানি থাকতো ,শীতকালে বা শুকনা মওসুমে আইলের উপর দিয়ে হেঁটেই আসা যাওয়া করা যেতো ।এই খালটি বা গাংটি এখন মৃত এর কোন অস্তিত্ব আছে বলে আমার জানা নেই তবুও মরা গুগালী গাং এর কথা মনে আছে তাই লিখছি ।
খান সাহেব বাড়ীর পশ্চিমে বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল “রাইয়ত বাড়ী “, এই খান বাহাদুর আমজদ আলী সাহেব ছিলেন বৃটিশ আমলে আই জিপি ( ইন্সপেক্টর জেনারেল ওব পোস্টেজ ) বাড়ীর পশ্চিমে অনেকের বাড়ী ছিল যারা এই মুল বাড়ীর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল , নানু সহ ঐ বাড়িতে তেমন একটা যাওয়া আসা হতো না বরং ওরা আসতো আমাদের বাড়িতে এবং তিনি আমাদেরকে তেমন একটা যোগাযোগ করতে ও দিতেন না তবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মেরা বর্তমানে বিত্তশালী ,অসীম ক্ষমতাধর ও সমাজে প্রতাবশালী ।
ঐ বাড়ীগুলোর পরেই ছিল ধানী জমি , এবং তার পর ধানী জমি পেরুলেই গ্রাম ,
বাড়ির পশ্চিমের গ্রামগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে মনুর বা মনসুর ,
মনসুরের আবার দুই ভাগে বিভক্ত একটা হলো মনুর অন্যটা বাদে মনুর , মনুর বা মনসুর এর পর যে গ্রাম গুলো আসে সেগুলো হচ্ছে ,আমতৈল , ভাগমতপুর , সাদেকপুর ,মৈন্তাম, গুপ্তগ্রাম ,তিলকপুর,কিয়াতলা,
হাসিমপুর , কাদিপুর , কৌলারশী,গোবিন্দপুর,ফরিদপুর,রফিনগর,গোপীনাথপুর ,ছকাপন,তিলকপুর,
হোসেনপুর ,,লক্ষীপুর ,উছাইল , নিংগিরাই,কাকিচার ,নয়াগাও,
অলিপুর , সুলতানপুর ,চুনঘর ,চাতলগাওয়ের একাংশ ইত্যাদি মিলে হয়তো আরও দুএকটি গ্রাম রয়েছে যা মিলে হলো কাদিপুর ইউনিয়ন।
এই কাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন , যাদের বীরত্ব গাথা আমাদের ৭১ সালে ঘটে যাওয়া মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসকে সম্বৃদ্ধশালী করে রেখেছে , তেমনি একজনের কথা মনে পড়ছে ,
তিনি হলেন ,মনসুর গ্রামের ছমসুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নং হচ্ছে ০৫৪০৪০২৮২ । পাকিস্তানী আর্মিরা কুলাউড়াতে এসে ক্যাম্প করার পর তিনি অন্যান্যদের সাথে গিয়ে যুদ্ধের ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে কর্মধা ,শিলুয়া , ফুলতলা প্রভৃতি স্থানে করেন সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন নিয়েছিলেন ।
তা ছাড়া বিশেষ ভাবে মনে পড়ছে ,আমতৈল গ্রামের মোঃ খালেদুর রব , তার পিতা ছিলেন মোঃ আব্দুর রব তিনি অত্যানত সাহসীকতার সাথে যুদ্ধের সময় তবিশেষ ভুমিকা পালন করেন । তাদের কুলাউড়ার বাসায় বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্তান করতো এবং তিনি তাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন । যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীনের পর তাদের বাসা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্র থানায় জমা দেওয়া হয় ।আমতৈল জন্ম নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদুর রবের ভাই এম এম শাহীন , সাংবাদিকতা ও পত্রিকা ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কুলাউড়ার রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন ।প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দের তালিকায় খালেদুর রবের নাম্বার হচ্ছে ০৫০৪০৪০৩১৬ ।
কাদিপুর ইউনিয়নের কৌলারশী বা মিনার মহল গ্রামে জন্ম নেওয়া আর এক বীর মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আজির উদ্দিন । তার কথা কেউ মনে করবে কিনা জানিনা তবে , প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নং ঃ- ৫০৪০৪০৩৭১ বিভিন্ন কারনে এই আলোচনায় তার নাম এসে যায় , তার পিতার নাম আমির উদ্দিন ,তার ভাষ্যমতে ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর থেকেই তারা বুঝতে পারেন পাক শোষকদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে সকলকে সংগ্রামে নামতে হবে এবং তখন থেকেই প্রস্তুতি নেন , মোজাহিদ সদস্য ছিলেন , শেরপুরের প্রতিরোধ ভাঙ্গার পর তার ভাই কবির উদ্দিন কে নিয়ে ভারতে চলে যান , ট্রেনিং নেন , ৪ নং সেক্টর এর অধীনে থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পে যুক্ত থেকে সাহসীকতার সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন ।দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কারনে
কয়েক জন রাজাকারোর প্ররোচনায় তাদের বাবা আমির উদ্দিনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানী মিলিটারীরা নির্মম ভাবে হত্যা করে ।
আমাদের উছলা পাড খান সাহেব বাড়ীর পশ্চিমের কাদিপুর ইউনিয়নের
মনুর বা মনসুর এবং বাদে মনুর বা বাদে মনসুর
গ্রামের ইতিহাস ঐতিয্য কুলাউড়ার ইতিহাসকে সম্বৃদ্ধশালী করে রেখেছে ।
যে ব্যক্তিটির নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম তিনি হচ্ছেন সিলেট অন্চলের কিংব্দন্তী “মামন্দ মনসুর” বা দেওয়ান মোহাম্মদ মনসুর , তিনি ছিলেন অত্যান্ত প্রতাপশালি জমিদার , তার পিতা দেওয়ান ইউসুফ ছিলেন ৮ নং তালুকের অধিকর্তা বা মালিক ।
তার নামঅনুসারে ইউসুফপুর বা ইছবপুর গ্রামের নামকরন করা হয়েছিল এই গ্রামটি বর্তমানে মনসুর গ্রামের সাথে একত্রিত হয়ে আছে ।
মামন্দ মনসুরের প্রপিতামহ মোহাম্মদ আনছফ বা মামন্দ আনছফ অত্যান্ত সাহসী, বলিষ্ঠ ও দুর্দান্ত দাপটি এক মহান পুরুষ ছিলেন ।
প্রবাদ ও জনশ্রুতি আছে তিনি সামান্য একটি ছুরি হাতে নিয়ে হিংস্র বাঘের উপর সরাসরি ঝাপিয়ে পড়তেন , লড়াই করতেন বাঘের সাথে , হার মানতো বনের হিংস্র বাঘ ,মামন্দ আনছফ নিজের জমিদারীর সীমানা নির্ধারণকল্পে উত্তর সীমানায় একটি খাল বা পরিখা খনন করান কুলাউড়া অন্চলে তখন এত জনবসতির নাম গন্ধ ছিল না , পাহাড় , জংগলে ঘেরা ছিল , বাঘ ভাল্লুক সহ বন্যপ্রাণীর আনাগোনা ছিল নিয়মিত ।তাদের পুর্বপুরুষ ছিলেন বাবা শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সাথী হযরত শাহ হেলিম উদ্দিন কোরেশী মামন্দ মনসুর হলেন তার চৌদ্দতম পুরুষ ।
ছোটবেলায় কুলাউড়ার প্রবাদ শুনেছি
লোকমুখে ঃ-
বেটা কইলে মামন্দ মনসুর
আর যত পুয়া ,
হাওর কইলে হাকালুকি,
আর যত কুয়া ।
দেওয়ান মোহাম্মদ মনসুর বা মামন্দ মনসুর সম্পর্কে , তার জীবনীতে ঘটে যাওয়া কৃতকর্মের অনেক গল্প , অজানা কাহিনী লোকমুখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে , ও বইয়ে প্রচলিত আছে ।
তার পিতা মামন্দ ইউসুফের অসুস্ততার জন্য অল্প বয়সেই তিনি জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান ।
তিনি পৃথ্বীমপাশার জমিদার গৌছ আলী খাঁর সমসাময়িক ছিলেন ।
ছোট বেলা থেকেই একটু রাগী ও জেদী স্বভাবের
ছিলেন কিন্তু জ্ঞানী এ পন্ডিত দের সম্মান করতেন । কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামের বাড়ি ছাড়াও মামন্দ মনসুরের আর একটি বাড়ী ছিল কর্মধা ইউনিয়নের মনসুরপুর গ্রামে ।
উভয় গ্রামের উভয় বাড়ীই একই রকম ভাবে নয় খন্ডে বিভক্ত , কর্মধার মনসুরপুর গ্রামের বাড়ীটি “ন-খন্ডী” বাড়ী নামে পরিচিত আর কাদিপুরের বাড়িটি “মান-মনসুরের বাড়ী “ নামে পরিচিত ।
ঐ বাড়ীগুলো মাটির দেয়াল দিয়ে নয় ভাগে ভাগ করা ছিল ।মামন্দ মনসুরের কোন ছেলে সন্তান ছিল না ,
তার তিন মেয়ে ছিল যথাক্রমে নজিফা বানু , সিতারা বানু ও খতিজা বানু ।
বড় মেয়ে নজিফা বানুর বিয়ে হয়েছিল সিলেটের মজুমদারীর আহমেদ আলী মজমাদারের সাথে ।আহমেদ আলী মজমাদারের পুর্বপুরুষ ছিলেন ভারতের কৈলাশশহরের জমিদার ।
দ্বিতীয় মেয়ে সিতারা বানুর বিয়ে হয়েছিল কুলাউড়ার কৌলা গ্রামের জমিদার আব্দুল আলীর সাথে , তৃতীয় মেয়ে খতিজা বানু অবিবাহিত ছিলেন এবং বাবার বাড়ীতেই মারা যান ।
উল্লেখ্য মামন্দ মনসুরের বড় মেয়ে নফিজা বানুর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয় সিলেটের মজুমদারীর মোহাম্মদ হাদী বখত মজমাদারের সাথে এবং দ্বিতীয় মেয়ের বিয়ে হয় সিলেট শহরের কুমারপারা ঝরনার পাড়ের আমার পুর্বপুরুষ সৈয়দ আব্দুল করিমের সাথে ।এই দ্বিতীয় মেয়ের অধঃস্তন পুরুষ ছিলেন আশরাফ আলী মজুমদার , তার নাম অনুসারে
এই কাদিপুর ইউনিয়ন ভুক্ত মনসুর গ্রামের মুলবাড়ীর সামনে “ আশরাফিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা “ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
আমাদের বাড়ির পুর্বপাশ্বে ছিলেন এই মান মনসুরের অন্যতম বংশধর তপন ভাই , তপন ভাইয়ের ছোট বোন বীনার সাথে সম্প্রতি ফেসবুকের কল্যানে যোগাযোগ , তার দেয়া তথ্য মতে
৩৬০ আউলিয়া এর একজন হলেন সুদূর ইয়ামেন থেকে আসা শাহ হেলিম উদ্দিন কোরেশী উনি প্রথম পূর্ব পুরুষ উনার ছেলে তাজউদ্দীন কুরেশি প্রথম মনসুর গ্রামে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন উনার ছেলে মান মনসুর ۔۔ মান মনসুর এর ভাতিজি উনার চাচাতো বোনের বিশাল সম্পত্তি উনার সম্পত্তির সাথে সাথে পান উনার কোলে থাকা সন্তান আদিল চৌধুরী ( মান মনসুর এর যে মেয়ের বিয়ে হয়নি উনার ভাগ এর অংশ ) আদিল চৌধুরী এর মা ব্রিটিশ আমলে জমিদারি তালুক নিলাম হয় যথাক্রমে আট ও নয় তখন ওদের কাছে প্রজা হয়ে থাকতে হবে বিধায় রাতারাতি ছেলে আদিল চৌধুরী কে নিয়ে ঘাগটিয়া তে বাড়ি বানিয়ে পাড়ি জমান যার জন্য এই বাড়ি কে হাজমা বাড়ি ও বলতো লোকেরা এবং খাজনা দিতে হতো যারা তপন ভাইদের প্রজা বা রাইয়ত । এদেরকে সরকার বাড়ি ও বলতো আমরা ও ছোটবেলাতে শুনসি সরকার ও জাইরাম বলতে আদিল চৌধুরী এর দুই ছেলে সন্তান নাদির চৌধুরী ও হাশিম চৌধুরী হাশিম চৌধুরীর ছেলে সন্তান আমিনুজ্জামান চৌধুরী অর্থাৎ তপন ভাই ও বীনার আব্বার দাদা উনার তিন সন্তান দুই ছেলে মাহমুদুজ্জামান চৌধুরী ও তপন ভাইয়ের দাদা কামরুজ্জামান চৌধুরী আর তাদের দাদি দাদাদের বোন ,উনার বিয়ে হয় পাথাড়ি বড়লেখা তপন ভাইয়ের আব্বা রা এক ভাই এক বোন , তার বড়ো দাদার চার ছেলে এক মেয়ে বড় জন মারা গেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার এ জব করতেন ,তাদের মেজোচাচা রেলওয়ে তে জব করতেন সেজো চাচা স্কটল্যান্ড এ আছেন আর ছোট চাচা মিশিগান এ আছেন তপন ভাইরা সাত ভাই বোন
,সবার বড় ভাই শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন ,মেজভাই সেলিমুজ্জামান চৌধুরী ছোট ভাই অমরুজ্জামান চৌধুরী নবাব
আলী আমজাদ এর নানী আদিল চৌধুরীর মেয়ে নাম সৈয়দা অমরুন্নেসা আর এক মেয়ে কৌলা বড়ো বাড়িতে বিয়ে হইসে আতিয়া চৌধুরী দের পূর্ব জেনারেশন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এর ফুপু আতিয়া চৌধুরী ও
নাদেল ভাইয়ের এর বাবা শামসুল আলম চৌধুরী এবং ওই বাড়ি আতিয়া বেগমের বাবা সৈয়দ বদরুল হোসাইন চৌধুরী উনার বাবা বশিরুল হোসেইন এর নামেই “বি এইচ প্রাইমারী স্কুল “নামে দক্ষিণ বাজারে একটি স্কুল আছে । আর উনার দেয়া স্কুল ঘাগটিয়ার সম্পত্তি মৌরসী সম্পত্তি
নাজিফা বানুর দেড়শো কিয়ার বা এক হাজার একর বিঘা টি গার্ডেনটি তপন ভাইদের সম্পত্তি যা ইস্পাহানি গাজীপুর এর সাথে এবং এই সম্পত্তি দখল করে ফল্স কেইস এ তপন ভায়েরা জিতেছিল কিন্তু লোকাল মাস্তান বাহিনী দিয়ে টাকা খাইয়ে তারা দখলে নিয়ে নিয়েছে ۔۔
তপন ভাইয়ের বড় চাচা মরহুম নাজিরুজ্জামান চৌধুরী
মেজো চাচা নাজিমুজ্জামান চৌধুরী
সেজো চাচা বদরুজামান চৌধুরী
ছোট চাচা ফখরুজ্জামান চৌধুরী ফকু ।
এবার কুলাউড়ার সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার
প্রয়োজন অনুভব করছি ,
বর্তমান কুলাউড়া উপজেলার উত্তরে ফেঞ্চুগঞ্জ ও জুড়ি উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে আসাম, পশ্চিমে রাজনগর উপজেলা।
পাহাড়, টিলা সমতল ও জলাভূমির সমন্বয়ে কুলাউড়ার ভূমি গঠিত। এখানকার পাহাড়, টিলা গুলো বনজ সম্পদে ভরপুর। তার মধ্যে অন্যতম চা বাগান। বাংলাদেশের মোট ১৫৩টি চা বাগানের মধ্যে, কুলাউড়া উপজেলায় ১৯ টি চা বাগান রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলায় মোট ১৭টি ইউনিয়ন ছিল। ২০০৪ সালের ২৬ আগষ্ট, ৪টি ইউনিয়ন জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল ও ফুলতলাকে আলাদা করে জুড়ী উপজেলা গঠন করা হয়।বর্তমানে ১৩ টি ইউনিয়ন রয়েছে কুলাউড়াতে, সেগুলি হচ্ছে ঃ-
১)বরমচাল ইউনিয়ন
২)ভূকশিমইল ইউনিয়ন
৩)জয়চন্ডী ইউনিয়ন
৪)ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন
৫)কাদিপুর ইউনিয়ন
৬)কুলাউড়া ইউনিয়ন
৭)রাউৎগাঁও ইউনিয়ন
৮)টিলাগাঁও ইউনিয়ন
৯)শরীফপুর ইউনিয়ন
১০)পৃথিমপাশা ইউনিয়ন
১১)কর্মধা ইউনিয়ন
১২)ভাটেরা ইউনিয়ন
১৩)হাজীপুর ইউনিয়ন
কুলাউড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে প্রাচীনকালের তাম্রলিপিতে কিছু তথ্য পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
কুশিয়ারা নদীর দক্ষিন তীরে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত,দ্বাদশ শতাব্দিতে “ইটা” নামে একটি সামন্ত রাজ্য ছিল।
“নিধিপতি শর্মা” নামে জনৈক ব্রাক্ষণ ইটা রাজ্যের রাজা ছিলেন। এক কালে এই রাজ্য
“ইটা মনুকুল” প্রদেশ নামেও অভহিত হতো।
প্রাচীন ইটারাজ্যের রাজধানী ছিল ‘ভূমিউড়া’ গ্রাম।
প্রাচীন নিদর্শন ভাটেরার তাম্র ফলকদ্বয়ের কুলাউড়া নামের কোন উল্লেখ নেই। তবে প্রাচীন একটি শ্লোকাংশে ‘‘লংলাইস্য কুলাউড়া, ইটাস্য নন্দিউড়া’’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে।
এ থেকে বোঝা যায়, পরগণা ভিত্তিক শাসনামলে কুলাউড়া নামটি ছিল এবং ইটা পরগণা নন্দিউড়ার ন্যায়, লংলা পরগণার কুলাউড়া একটি প্রসিদ্ধ স্থান।
“হযরত শাহ হেলিম উদ্দিন কোরেশী” নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মনসুর গ্রামের প্রখ্যাত দেওয়ান, মোহাম্মদ মুনসুর বা “মামন্দ মনসুরের” পিতামহ মামন্দ মনোহরের ভাই “মামন্দ কুলাঅর “ কুমার থাকাবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন।
মামন্দ মনোহর ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে নিজ জমিদারির পূর্বাংশে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করে নাম রাখেন “কুলঅরার বাজার’’। কালক্রমে “কুলঅরার বাজার থেকে কুলাউড়া’’নামকরণ করা হয়েছে।কুলাউড়া নামকরনের আরো কিছু জনশ্রুতি রয়েছে তবে সঠিক তথ্যের অভাবে নামকরনের সুত্রের পক্ষে কোন গবেষকই অতীতে তোমন জোড়ালো দাবী রাখতে পারেন নাই ।
সিলেট বিভাগের অন্যান্য উপজেলোর চাইতে কুলাউড়া অনেক অগ্রসর ও উন্নত সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। অনেক কৃতি সন্তানের জন্ম এই কুলাউড়ায় যাদের দুই এক জনের কথা না বললেই নয় ,
সিলেট অঞ্চলের প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘বলাকা’র সম্পাদক শ্রী কালীপ্রসন্ন সিংহের বাড়ি এই কুলাউড়ায় আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক- শ্রী গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্যের বাড়ি কুলাউড়া সদরে ।
প্রাচীনকালে কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকা জাহাজ ও যুদ্ধাস্র নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ছিল।
সতের শতকে কুলাউড়ার
“জনার্দ্ধন কর্মকারের” খ্যাতি ও সুনাম ছিল সমগ্র উপমহাদেশব্যাপি।
জনার্দ্ধন কর্মকার ঢাকার
“কালে জমজ” (সদরঘাটের কামান বলে খ্যাত) ও “বিবি মরিয়ম “নামের লোহার দুটি কামান তৈরী করেন এবং এর ফলে কামান তৈরীর কারিগর হিসাবে ইতিহাসের খাতায় তার নাম অংকিত হয়ে আছে ,
যিনি কুলাউড়ার সন্তান । তার কোন বংশধরেরা এখন জীবিত আছেন কিনা বা থেকে থাকলে কোথায় আছেন , কেমন আছেন তা আমাদের অজানা , হয়তো এই লেখাটি পড়ে কেউ “জনার্দ্ধন কর্মকার” এর বংশধর দের তথ্য দিয়ে আমাদের কে সহায়তা করবেন ।
(চলবে
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।