
ময়নুল হক পবন :কুলাউড়ায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে পাহাড়ে বসবাসরত খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে খাসিয়াপুঞ্জিসহ গ্রাম এলাকায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধরন বদলে ডেঙ্গু ভাইরাস এখন আরও বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। এজন্য ডেঙ্গুর লার্ভা অনুসন্ধান ও সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া হাসপাতালে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদিকে পাশ^বর্তী বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেল কাউন্টার চালু থাকলেও কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেল কাউন্টার মেশিন নেই। সিবিসি পরীক্ষায় প্লাটিলেট কাউন্ট দেয়া হয়না।
মহামারি আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতি ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালের পরিচালক ডেভিড পাহান বলেন, গত দুই-তিন মাসে মিশন হাসপাতাল থেকে ১২০ জন চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন। বর্তমানে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।
গত মাস দেড়েক সময় থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের প্রায় ১৫-২০টি খাসিয়া পুঞ্জি ও কয়েকটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কুলাউড়া উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সীমান্তবর্তী উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালে ৫০ জন রবিরবাজারে স্থানীয় চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম সোহাগের চেম্বারে ২০ জন ও চিকিৎসক ফরিদ আহমদের চেম্বারে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন। এছাড়া ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধি ও আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১৫ নভেম্বর কর্মধা ইউনিয়নে ৩০০ শতাধিক মশারি বিতরণ এবং কুলাউড়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোঃ মহিউদ্দিন। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান। কর্মধা ইউনিয়ন ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতীয় লোকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে আসায় মূলত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত কালাপাহাড় ও খাসিয়াপুঞ্জিতে ঘুরতে আসেন। এছাড়া পুঞ্জির বাসিন্দা অনেক শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছেন। অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পুঞ্জিতে চলে আসে বিশ্রামের জন্য। এসব কারণে পাহাড়ি পুঞ্জিগুলোতে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়েছে। এদিকে কুলাউড়ার সচেতন মহলের দাবি, যেহেতু কর্মধা ইউনিয়নে সর্বাধিক হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ছাড়াও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কুকিজুড়ি পুঞ্জিতে ৫০ জন, ডলুছড়া পুঞ্জিতে প্রায় ৭০ জন, লবনছড়া পুঞ্জিতে প্রায় ৬০ জন, নুনছড়া পুঞ্জিতে ৫০ জন, কুকিবাড়ি পুঞ্জিতে প্রায় ১০জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে পাহাড়ি বিভিন্ন পুঞ্জিতে কাজ করা অনেক শ্রমিকও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব ফটিগুলির সুমন মিয়া, ফটিগুলির কামাল মিয়া, নুনা টিল্লার রফিক মিয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুলাউড়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
কুলাউড়ার এওলাছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা যমুনা লাংবাং বলেন, আমার মা সাবিত্রী লাংবাং ও বোনের স্বামী এডিলাক গত বুধবার থেকে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। আমাদের পুঞ্জিতে ছয়-সাতজন আক্রান্ত হয়ে অন্যত্র ভর্তি রয়েছেন।
কর্র্মধা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও কুকিবাড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা সিলভেস্টার পাটাং বলেন, গত চার সপ্তাহ আগে আমার ছোটভাই জেরবাস (৪০) গত ১০ নভেম্বর পাশ^বর্তী লুথিজুড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা তিতুশ জিব্রা (৪২) ডেঙ্গু জ¦রের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন। তন্মধ্যে জেরবাস বাড়িতে ও তিতুশ সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। তিনি আরো বলেন, কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি খাসিয়া পুঞ্জিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ঘরে ঘরে জ¦র, বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুর্গত এলাকা থাকায় অনেকেই উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পুঞ্জিগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারিভাবে ক্যাম্প পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাকির হোসেন বুধবার রাত ৯ টায় জানান, কুলাউড়া সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত শতাধিক ডেঙ্গু রোগী সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। অনেকে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।তিনি জানান,ভারতের বর্ডারের নিকটবর্তী ইউনিয়ন কর্মধা হওয়ায় ভারত থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার কারনে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে বলে আশংকা করছি #
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।