প্রকৃতি মানেই সর্বজীবের অস্তিত্ব। আর এ অস্তিত্বের সীমানায় রয়েছে পাখি।
এই পাখিই হলো প্রকৃতির সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য পরম উপকারী এক জীববৈচিত্র্য। আমাদের কিছু প্রজাতির পাখিরা বসবাস করে পানিতে।
প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোতে রয়েছে জলচল পাখিদের নয়নাভিরাম বিচরণ। কিন্তু সাধারণ মানুষের দৃষ্টির ভেতর এ জাতীয় পাখিগুলো ধরা পড়ে না তেমন।
যারা পাখি ভালোবাসেন, পাখির প্রতি ভালোলাগা যাদের চিরদিনের কেবল তারাই সেই অদেখা পাখিদের খুঁজে বের করে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করতে ভুল করেন না।
বাংলার প্রকৃতি পাখিদের জন্য প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর বিস্তৃর্ণ দিগন্ত ছড়িয়ে রেখেছে।
যেখানে নানা প্রজাতির পাখিরা তাদের কলকাকলীমুখর সময়টুকু অতিবাহিত করে। ডানায় ভর করে ওড়ে যায় এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। অবদান রাখে জলাভূমিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে মৎস্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে।
জলচর পাখিরা নীরবে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোতে অপরিসীম উপকার সাধন করে। তাদের ক্রমাগত ডানা ঝাপটানো, দৌঁড়ঝাপ কিংবা পানি গায়ে মেখে ছুটে চলার মাঝে জলাভূমির ভেতরে থাকা নানা প্রজাতির মাছেরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকু সহজে গ্রহণের সুযোগ পায়। যা তাদের বাড়ন্ত দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
আমাদের দেশের জলাভূমিগুলোতে বসবাস করা এক বিশেষ প্রজাতির পাখির নাম ‘দলপিপি’। কেউ কেউ অবশ্য একে ‘জলপিপি’ও বলে থাকেন। এর ইংরেজি নাম Bronze Winged Jacana এবং বৈজ্ঞানিক নাম Metopidius indicus। অনেকে ভুল করে এই পাখিটিকে ‘ডাহুক’ বলে থাকেন। আসলে ডাহুক ভিন্ন একটি প্রজাতির পাখি।
এই দলপিপি পাখির ছবি এবং ভিডিও ধারণের সময় দেখা গেছে, সে শিকার ধরার উদ্দেশ্যে নিঃশব্দে স্থির ভঙ্গিমায় এক জায়গায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। শত্রুর উপস্থিতি বা ভয় পেলে সে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে পাতার আড়ালে দ্রুত লুকিয়ে ফেলে। তারপর বিলের পানিতে শরীর ডুবিয়ে দিয়ে মাথা তুলে পরিস্থিতি অবলোকন করতে থাকে। নিরাপদ মনে হলে তারপর পাতার আড়াল থেকে বের হয়ে আসে। জুন-জুলাই মাস এদের প্রজনন মৌসুম। বাদামি রঙের চারটি ডিম পাড়ে।
দলপিপি আকারে কবুতরের সমান এবং দৈর্ঘ্যে ২৮ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের কালচে-ব্রঞ্জ দেহ। সূর্যালোকে পিঠ এবং ডানা সবুজাভ-ব্রঞ্জ রঙের দেখায়। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক উজ্জ্বল নীলাভ-কালো। চোখের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত প্রশস্ত সারা রঙের লাইন। তাদের পা লম্বা এবং হালকা সবুজ রঙের। ঠোঁট সবুজাভ-হলদে রঙের হয়ে থাকে।
এদের দুই পা এবং দুই পায়ের আঙুলগুলো বেশ লম্বা হওয়ার কারণে এরা খুব সহজেই জলজ উদ্ভিদের পাতার উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারে। এদের প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়। শাপলা-পদ্মপাতার নিচে যেসব পোকা থাকে সেগুলো দলপিপি ধরে ধরে খায়। পাতা উল্টে শিকার ধরতে ওরা ভীষণ পটু। পোকা, শামুক জাতীয় ছোট প্রাণী, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, ঘাস, উদ্ভিদের বীজ ও অঙ্কুর খেয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশ এর গবেষণা অনুযায়ী এ দলপিপি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত।
বাংলানিউজ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।