আত্মহ*ত্যা নয়,ধৈর্য শক্তিই সমস্যার সমাধান।
এম আতিকুর রহমান আখই।
প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে- এটা আমরা সবাই জানি। এটাও জানি, মৃত্যু নিশ্চিত- এটা থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই মৃত্যুর সঙ্গে আরও একটি শব্দ যেটা প্রায়ই আমরা দেখি তা হলো, আত্মহত্যা। বর্তমান সময়ে এটির প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু কেন এই আত্মহত্যা? এটাই কি সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়? কীসের আশায় মানুষ নিজের জীবনকে নিজেই হত্যা করছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেই সামনে চলে আসে আত্মহ*ত্যার করুণ রূপ!
প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারি বলেই আমরা মানুষ। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। ভাঙা-গড়ার প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করে মানবজন্মকে বৃথা করা আমাদের উচিত নয়। কিছু সময় জীবনে আসবেই যেগুলো পার করা সত্যিই কষ্টকর। কেউ পাশে না থাকা বা গভীর একাকিত্ব কিংবা বিচ্ছেদ অথবা ব্যর্থতার বৃত্তে আবর্তিত হওয়া- এগুলো সবার জীবনেই আসে এবং আসবেই। এটাই সত্য। নিজের জীবনকে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে। জীবনের গূঢ় সত্যটা ভাবলে দেখা যায়, বেদনাও সুন্দর। বেদনাকেও উপভোগ করা যায়। প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা। তারপর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। প্রতিটি মানুষের উচিত ভালো ও ইতিবাচক চিন্তার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখাও সুখী জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবসর সময়টাকে একাকিত্ব হিসেবে না দেখে নিজের প্রিয় কোনো কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। সেটা হতে পারে আড্ডা, বইপড়া, টিভি দেখা, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা। যারা একাকিত্ব অনুভব করেন, তারা সম্পর্ক গড়ায় মনোযোগ দিন। ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে আসুন, শখের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, ধর্মকর্ম পালনে মনোযোগ দিন। দেখবেন জীবন অনেক উপভোগ্য। যারা ব্যর্থতার চক্রাকারে আবদ্ধ তারা লড়াই করুন। পরিশ্রম কখনও কাউকে নিরাশ করে না। নিজেকে ব্যর্থ মনে করে পৃথিবীকে যত কুৎসিত মনে করছেন, একবার শুধু সফল হোন, ততগুণ বেশি সুন্দর দেখবেন পৃথিবীকে। কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা আত্মহনন করেন হীনম্মন্যতায়, মর্যাদাহানিতে, অপরাধের শিকার হয়ে। তাদের উদ্দেশে বলব, ফিরে আসতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই নতুন জীবনে ফেরা সম্ভব। আমাদের সবার জীবনের মূলমন্ত্র একই, তা হলো লড়াই বা যুদ্ধ।
একজন ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য বহাল রাখার দায়িত্ব সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারেরই। কেউ ব্যর্থ হলে, অন্যায় করলে কিংবা কারও সঙ্গে অন্যায় হলে তাকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। তাকে ধিক্কার দেওয়া, মানসিকভাবে অপদস্থ করা বা সামাজিকভাবে হেয় করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। কাউকে মানসিকভাবে সতেজ রাখার উপায় হলো তাকে সঙ্গ দেওয়া। বর্তমানের অধিকাংশ আত্মহ*ত্যাই হলো মানুসিক যন্ত্রণা থেকে। নিঃসঙ্গ একাকি গভীরে প্রতিটি মানুই চায় তার প্রিয়জনের সকল চাহিদা মেটাতে। কিন্তু নানাবিধ প্রতিকূলতার কারনে তা সম্ভব হয়না।তাই, পরিবার পরিজনের উচিত হবে কর্তা ব্যক্তির সামর্থের প্রতি লক্ষ রেখে নিজেদের চাহিদার কথা প্রকাশ করা।
সর্বপরি এক আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও নিজের অবস্থা বিবেচনা করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে হতাশার মাত্রা কমবে বলে মনে করি। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমরা আত্মহ*ত্যা নামক ব্যাধি থেকে রক্ষা পেথে প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও জনসচেতনতা।
এম আতিকুর রহমান আখই
সিনিয়র সাংবাদিক।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।