
ষ্টাফ রিপোর্টার। গ্রেটার সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে এখন একজন যোগ্য অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রয়োজন। বিএনপি বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত। শোনা যাচ্ছে, হুমায়ুন কবির—যিনি ভবিষ্যতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারতেন—এবার নির্বাচনী তালিকায় নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে (যদিও নির্বাচন নিয়ে এখনও অনেক অনিশ্চয়তা), তিনি হয়তো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে থাকতে পারেন।
বৃহত্তর সিলেটের আজকের সবচেয়ে বড় দরকার হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সরকারি সম্পদের ন্যায্য বণ্টন, চাকরি সৃষ্টি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে সিলেটিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এই কাজের জন্য একজন দক্ষ নেতা প্রয়োজন, যিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে পারবেন, জানেন কীভাবে সরকারি টাকা বণ্টন হয়, কীভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়।
ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, একসময় অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিলেটিদের হাতে ছিল। এম সাইফুর রহমান, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আবুল মাল আবদুল মুহিত তার ভাই (মাকালবাঁশ? , হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং অ্যাডমিরাল এম এ খান ছিলেন সিলেটের গর্ব। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সংসদে দাঁড়িয়ে দাপটের সঙ্গে কথা বলতেন এবং সিলেটকেও কখনো ভুলতেন না।
তবে বর্তমানে সেই ধারাবাহিকতা নেই। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে এখন এমন কোনো সিলেটি মুখ দেখা যায় না, যিনি বাজেট, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রকল্পের খুঁটিনাটি বোঝেন, সরকারের কাজে অভিজ্ঞ এবং সিলেটের হয়ে কথা বলতে পারেন। বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপি—কোনো দলে এখনও এমন কেউ নেই, যিনি এই দায়িত্ব নিতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে সৎ, পারদর্শী এবং স্মার্ট, সরকারি কাজ বোঝেন এমন কাউকে বিশেষ কোটা বা টেকনোক্র্যাট হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আনা যায় কিনা ভাবার সময় এসেছে। না হলে সিলেট, সিলেটের মানুষ এবং উন্নয়নের আলো থেকে চিরতরে পিছিয়ে থাকবে।
সিলেট কেবল চা-বাগানের সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকা নয়; এটি জ্ঞান, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং প্রবাসের শহর। এখন দরকার এমন নেতৃত্ব, যিনি সিলেটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন—যেমন একদিন করেছেন এম সাইফুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এম সাইফুর রহমান ছিলেন ক্ষণজন্মা বিরল প্রতিভা। তিনি আধুনিক বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনের মহান স্থপতি এবং একমাত্র বাংলাদেশী যিনি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে লোভনীয় বেতনের চাকুরি ছেড়ে তিনি দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর এই সাফল্যের কারণে আজো বাংলাদেশের মানুষের মনে বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর নাম উঠলে সবার আগে স্মরণ আসে এম সাইফুর রহমানের।
মরহুম এম সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণমূলক এক লিখায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল মাহবুব উল্লেখ করেছিলেন, বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তান সফরের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে বিদায় দিতে এসে এম সাইফুর রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “আপনি তো চলে যাচ্ছেন, আপনার দেশের অর্থনীতিকে নতুন চেহারা দেয়ার এই যাদুর কাঠি আমাদের দেশের জন্য রেখে যান।”
সাইফুর রহমান বহু সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততা এবং মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছাই তাকে রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ জাগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি সব সময় সিলেট সহ বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দলের উপরে থেকে কাজ করেছেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পীকার থাকাকালীন সিলেটের প্রবেশদ্বারে “হুমায়ুন রশীদ স্কোয়ার” নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, নিজ দলীয় নেতা সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উদ্যোগে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল।
দুর্ভাগ্য, নতুন প্রজন্মের সিলেটিরা এমন একজন ক্ষণজন্মা নেতা এম সাইফুর রহমানকে দেখার সুযোগ পায়নি। আজও তার স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী নেতৃত্ব সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রেরণার উৎস।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।